ইমরান আলী: কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানীর নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে ক্লাব-বার। গভীর রাত পর্যন্ত ক্লাব, বার এবং হোটেলগুলোয় চলে নানা ধরনের পার্টি। আনাগোনা ঘটে নানা শ্রেণির মানুষের। একশ্রেণির উঠতি সন্ত্রাসীরাও অংশ নেয় এ পার্টিগুলোয়। গুলশানের নিরাপত্তা কয়েকগুণ বাড়ানো হলেও বন্ধ হচ্ছে না ক্লাব ও বারগুলোর পার্টির নামে অসামাজিক কর্মকান্ড। চলছে গভীর রাতে মদ খেয়ে রাস্তায় প্রকাশ্য উচ্ছৃঙ্খলতা, দ্রæতগতিতে গাড়ি চালানো।
পুলিশের চেকপোস্ট থাকা সত্তে¡ও বেপরোয়া তারা। অনেক সময় পুলিশের সঙ্গেও বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন তারা। সম্প্রতি গুলশানের একটি স্পা সেন্টারে অভিযানের সময় দুই তরুণীর মৃত্যুকে ঘিরে অভিজাত এ এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আবারো প্রশ্ন উঠেছে।
তবে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, গুলশান-বনানীতে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অবগত। বিগত কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সতর্কভাবেই তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেন। সিসি ক্যামেরায় আবদ্ধ এ এলাকা। পুলিশের ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ইউনিটও সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, যে ধরনের অসামাজিক কার্যকালাপের বিষয়টি আসছে, সেগুলো বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর আগে ক্যাপিটাল রিক্রেয়েশন ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। মামলা করেন ক্লাবটির সভাপতি কেএম মঞ্জুরসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। শুধু ক্যাপিটাল ক্লাব নয় এ কার্নিয়া ক্লাব, লেক ভিউ, লেক ডিপ্লোমা, ফু-ওয়াং, কোরিয়ান ক্লাব এবং কেএনবিসহ অসংখ্য ক্লাবে প্রতি রাতে পার্টির আয়োজন থাকে। ক্যাপিটার ক্লাবের মদ বিক্রির অনুমতি না থাকলেও তার নেতৃত্বেই মদ বিক্রি শুরু হয়।
এর আগে গুলশানে তার বিজনেস ক্লাবটি মদ জুয়ার কারণেই বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। র্যাবের অভিযানের পর ক্যাপিটাল ক্লাব কিছুদিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে আবারো আগের অবস্থায় চলে এসেছে। প্রতি রাতে কোনো কোনো পার্টির আয়োজন থাকে ক্লাবে। আসলে পার্টির আড়ালে চলে মদ ও জুয়ার রমরমা আসর। অনুসন্ধানে জানা যায়, গুলশানকে ঘিরে অন্তত অর্ধশত ক্লাব ও বার রয়েছে। যে ক্লাবগুলোয় মদ বিক্রির কোনোরকম অনুমোদন নেই।
অথচ ওই ক্লাবগুলোয় প্রতি রাতেই পার্টির নামে একরকম আসর বসে। আর এ আসরগুলোয় উপস্থিত হয় উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ। গভীর রাত পর্যন্ত এ আসর চলে। আর যখন তারা আসর থেকে বের হয়, তখন রাস্তায় উচ্ছৃঙ্খলতা ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায়। অনেক সময় পুলিশ তাদের আটকিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এ ধরনের কর্মকান্ডে এ এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানা পুলিশের কয়েক উপপরিদর্শক বলেন, রাতে ডিউটির সময় এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। দেখা যায়, মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছে অথবা প্রকাশ্য রাস্তায় উচ্ছৃঙ্খলতা করছে। এ সময় কোনো কিছু বলতে গেলে উল্টো তারা পুলিশের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। মাঝে মাঝে আটক করে থানায় নিয়ে এলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে ছেড়ে দিতে হয়।
তারা বলেন, গভীর রাতে ক‚টনৈতিক এলাকার রাস্তায় মাতলামি, ওভার স্পিডিং নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এগুলো বন্ধ করতে আমাদের পর্যায় থেকে সম্ভব না। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা নির্দেশ দিলে এগুলো এক দিনের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া যায়। এর জন্য ইচ্ছার প্রয়োজন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি। পার্টির নামে অসামাজিক কর্মকান্ড করা ক্লাব বারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। গুলশান থানার ওসি বলেন, এ এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আর এ তালিকার মধ্যে জুয়ার আসরগুলোও রয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে থানা পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেদি হাসানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, অনুমোদনহীন যেসব বার, ক্লাব রয়েছে সেগুলোয় শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ওই এলাকায় মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এদিকে গত কয়েকদিন আগে রাজধানীর গুলশানের একটি স্পা সেন্টারে সিটি করপোরেশন কর্তৃক চালানো হয় অভিযান। অভিযানের সময় দুই তরুণীর মৃত্যু হয়। এতে করে আবারো এ এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গুলশান-বনানী এলাকায় আবারো নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকালাপ জমে উঠেছে। সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সালাম মাসিক মাসোহারা না পাওয়ায় অভিযান চালানোর মধ্যে দিয়ে অসামাজিক কার্যকালাপের বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেছে। জানা গেছে, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস, বার এবং ক্লাবগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন মাসোহারা, তেমনি সেটি করপোরেশনের ওই ম্যাজিস্ট্রেট সালামও পেয়ে থাকে।
এ কারণে সবাই এ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ থাকে। যখন কোনো ঘটনা ঘটে, তখন সরব হয়। কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এলাকাকে নিরাপত্তার স্বার্থেই সব ধরনের অনৈতিক ও অসামাজিক কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
ভোরের আকাশ/নি