logo
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:৩৬
জমে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ খেজুর গুড়ের হাট
শিরিন জামান, চুয়াডাঙ্গা

জমে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ খেজুর গুড়ের হাট

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে ভোর থেকে শুরু হওয়া বাজারে কৃষকেরা গুড়ভর্তি মাটির কলস বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।

শিরিন জামান, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ হাটে আসতেই চোখে পড়ে সারি সারি বাইসাইকেল, আলমসাধূ, নছিমন-করিমন ও কলসি ভর্তি গুড়। একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, আজ সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট।

 

সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হওয়া হাটে সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কৃষকেরা গুড়ভর্তি মাটির কলস (ভাঁড়) নিয়ে এসেছেন। নলেন গুড়ের গন্ধে চারিদিকে মো-মো করছে। ক্রেতা (মূলত গুড় ব্যাপারি) হাতে থাকা লোহার শিক দিয়ে গুড় ও পাটালি ভেঙে মুখে পুরে পরীক্ষা করছেন। দরদাম ঠিক হলেই গুড়ের কলসগুলো মাঠের একপাশে নিয়ে ওজন করে সাজানো হচ্ছে। ওজন করার পর প্রতিটি কলসের গায়ে সাংকেতিক চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে।

 

এখানকার খেজুর গুড়ের সুনাম সারাদেশে। এমনকি বিদেশেও রফতানি হয়। চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি আছে। স্বাদে-গন্ধেও অতুলনীয়। খেজুর গুড় ও নলেন পাটালি বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে এখন জমজমাট ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ সাপ্তাহিক শুক্রবার ও সোমবারের হাট। হাটের দিন এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ব্যাপারিসহ হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতা।

 

ফলে জমে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট। বিগত বছরগুলোর মতো গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ব্যাপারীরা। বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েকশ বছরের।

 

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে জেলার সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসে এ হাট। সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার এ হাটে ফজরের নামাজের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। গত বছর (গত মৌসুমে) প্রতি সপ্তাহে প্রায় দুই কোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হলেও চলতি (মৌসুমে) বছর গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় এবার সপ্তাহে প্রায় আড়াই কোটি টাকার গুড় ও পাটালি বেচা-কেনা হচ্ছে বলে জানান পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

 

স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমে খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয় এ হাটে। মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে হাট।

 


চুয়াডাঙ্গা সদরের বেলগাছি গ্রামের মোতালেব বিশ্বাসের ছেলে আলাউদ্দীন বিশ্বাস জানান, এবার তিনি ২০০ গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেছেন। এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য মাসিক বেতনে একই গ্রামের সাইফুল গাছিকে কাজে রেখেছেন। এবারের মৌসুমে তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার পাটালি ও গুড় বিক্রি করবেন। সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে এবারের মৌসুমে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা আয় হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

 

সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ শেখ জানান, এ হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় গুড়। চলতি মৌসুমে প্রতি হাটের দিন গড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কলসি (বড় ভাড়) খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।

 

তিনি দাবি করেন, সরোজগঞ্জ হাটে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ গুড়ই এলাকার কৃষকেরা বাড়িতে যতেœর সঙ্গে তৈরি করেন। এতে চিনি বা কোনো রাসায়নিক কিছু নেই। কিছুটা খয়েরি রঙের হলেও এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি।

 

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত মৌসুমের তুলনায় চলিত মৌসুমে জেলার ৪ উপজেলায় ১৬ হাজার নতুন খেজুর গাছ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করছেন। এবারের মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে কৃষকরা রস আহরণ (সংগ্রহ) করছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মৌসুম। এই মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে।

 

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুভাস চদ্র জানান, মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি