logo
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:৩৮
১৮ জানুয়ারি তেল উত্তোলন বন্ধ, ২২ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট
সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট : পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘটের ডাক
খালেদ আহমদ, সিলেট ব্যুরো

সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট : পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘটের ডাক

খালেদ আহমদ, সিলেট ব্যুরো:  সিলেটজুড়ে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেকের কম সরবরাহ ও সেই সরবরাহ নিয়মিত না হওয়ায় এই সংকট মারাত্মক আকার ধারন করেছে। সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে চলা জ্বালানি তেলের সঙ্কট দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ এনে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পেট্রলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটি।

 

আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। এর আগে আগামী বুধবার থেকেই সব ডিপ থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ রাখা হবে এবং ২২ জানুয়ারি রোববার থেকে একযোগে সিলেট বিভাগের সকল পেট্রল পাম্পে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুশিয়ারী দিয়েছেন পাম্প মালিকগণ।

 

জানা গেছে, সিলেটের পেট্রল পাম্পগুলোতে পেট্রল-ডিজেল ও অকটেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিলেটের স্থানীয় পরিশোধনাগার বন্ধ থাকা, রেলের ওয়াগন সংকট ও শীত মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যাওয়া এই সংকট ক্রমশ ঘনীভ‚ত হচ্ছে। এই সংকট নিরসনে সিলেটের পরিশোধনাগারগুলো চালুর দাবিতে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে বন্ধ রাখা হয়েছে শোধনাগারগুলো। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল বিপণন সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সিলেটের জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে দেয়।

 

সংস্থাটি সিলেটের ব্যবসায়ীদের আশুগঞ্জ থেকে নিজ খরচে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করার কথা বলায় বাড়ছে পরিবহন ব্যয়। ফলে সরবরাহ কম থাকায় বিভাগের সব পেট্রল পাম্পগুলো চলছে কম তেল নিয়ে। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে ডিজেলের। ব্যবসায়ীদের দাবি চাহিদার অর্ধেক ডিজেলও পাচ্ছেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধান না হওয়ায় ২২ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও পেট্রল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটি।

 

রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী।

 

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে জ্বালানি তেল সংকট চলে আসছে। বার বার সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সমাধান আসছেনা। তাই আগামী ১৮ জানুয়ারি থেকে ডিপু থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ থাকবে। আর ২২ জানুয়ারি থেকে সিলেটের সকল পাম্প অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

 

পেট্রল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় পেট্রল পাম্প রয়েছে ১১৪টি। এরমধ্যে সিলেট নগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় রয়েছে ৭০টি পাম্প। এসব পাম্পে প্রতিদিন পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয় অর্ধেকের কম অর্থাৎ ৪ লাখ লিটারের কম। তাছাড়া নিম্ন মানের তেল সরবরাহ করার কারণে ক্রেতাদের ক্ষোভের শিকার হন মালিক কর্তৃপক্ষ। মোবাইল কোর্টে অভিযান পরিচালনার কারণে আর্থিক জরিমানা গুনতে হয় পাম্প মালিকদেরকে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের পাম্পে জ¦ালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে ওয়াগনের মাধ্যমে। কিন্তু ওয়াগন সংকট যেন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ফলে রিজার্ভ থেকে গ্রাহক চাহিদা পূরণ করতে হয়। এখন রিজার্ভও শেষ হওয়ার পথে। আগে সিলেটের গ্যাস ফিল্ডসমূহের খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ¦ালানি তেল উৎপাদন করে সিলেটের পাম্পে সরবরাহ করা হতো। তখন জ¦ালানি তেলের সংকটের মুখে পড়তে হয়নি।

 

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগ পেট্রা পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ বলেন, সিলেটের গ্যাস ফিল্ড থেকে জ¦ালানি উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর থেকে সিলেটের পেট্রল পাম্প ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ শুরু হয়েছিল। এরপরও সরকারি বিপণন কোম্পানীগুলো সিলেট ডিপো থেকে চাহিদার অর্ধেক জ¦ালানি তেল সরবরাহ করে আসছিল।

 

সম্প্রতি বোরো মওসুম শুরু হওয়ায় তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে কোম্পানীগুলো তেল সরবরাহে অনিয়ম শুরু করে। সিলেট ডিপোতে সরবরাহ বন্ধ করে আশুগঞ্জ ডিপো থেকে তেল সরবরাহ করার জন্য বলে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। লোকসান দিয়ে পাম্প চালানো মালিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ধর্মঘটের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া ওপায় নেই। এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম মজিবুর রহমান বলেন, সিলেটে জ্বালানি তেলের কোনো সংকট নেই।

 

গত সপ্তাহে যোগাযোগজনিত কারণে ২টা ওয়াগন কম এসেছে। অচিরেই এ সংকট কেটে যাবে। এছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল মজুতও আছে।

 

ভোরের আকাশ/নি