আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে ২৭ তম জাতীয় কৃমি সপ্তাহ। প্রথম ধাপে ৪৪ জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ শিশুকে ওষুধ খাওয়ানো হবে। প্রথম ধাপের এ কাযক্রম চলবে ৩১ জানুয়ারি পযন্ত ।
জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশিদ আলম এ তথ্য জানান। রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ৫-১১ বছর বয়সী সকল শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২-১৬ বছর বয়সী সকল শিশুকে ১ ডোজ কৃমি নাশক ঔষধ (মেবেন্ডাজল বা ডারমক্স ৫০০ মি:গ্রা:) ভরা পেটে সেবন করানো হবে।
২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্যে ৫-১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উদযাপন করার লক্ষ্য হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ৫- ১৬ বছর বয়সী সকল (স্কুলগামী, স্কুল বহির্ভূত, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, পথ শিশু, কর্মজীবি শিশু) শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ঔষধ বিনামূল্যে সেবন করানো। এতদসঙ্গে কৃমির পূণঃসংক্রমণ রোধ কল্পে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।
এসব শিশুদেরকে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমি সহ অন্যান্য পরজীবী বাহিত রোগব্যাধি থেকেও পরিত্রাণ পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে, কৃমির সংক্রমণ বয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের মধেই সবচেয়ে বেশী (০-৪) বছর ৭%, ৫-১৪ বছর ৩২%, ১৫-২৪ বছর ১৫%, ২৫-৪৪ বছর ৭%, ৪৫-৫৪ বছর ৫%, ৫৫ বছরের অধিক বয়সী - মানুষের মধ্যে ৪%)।
উল্লেখিত জরীপের উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের মাঝে এই কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে কর্মসূচীটি ২০০৫ সনে প্রথমত: ৩ জেলায় নেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে জুন ২০০৭ পর্যন্ত ১৬ জেলায়, মে ২০০৮ পর্যন্ত ২৪ জেলায় ও নভেম্বর ২০০৮ থেকে ৬৪ টি জেলায় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমটি সম্প্রসারিত করা হয়। শুরুতে এই কর্মসূচীটি শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে সীমিত রেখে চালু করা হয়।
কারণ সমাজের ৬-১২ বছর বয়সী অধিক সংখ্যক শিশুর উপস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজেই নিশ্চিত করা যায়। আর তাই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন - সরকারি, বেসরকারি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিভারগার্টেন, মক্তব, মাদ্রাসা ও এনজিও পরিচালিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুব সহজেই অধিক সংখ্যক শিশুকে কৃমি নাশক বড়ি সেবন করানো যায়।
পরবর্তীতে লক্ষ্য করা যায় যে, ৫ বছর বয়সী অনেক শিশুই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যায় আর তাই নভেম্বর ২০১০ সাল থেকে উক্ত কর্মসূচীতে ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত তথ্য মোতাবেক ৫-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের হার সর্বাধিক (৩২%) বিধায় ১২ বছর বা তার অধিক বয়সী শিশুদের অন্তর্ভূক্ত করতে দেশের সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল রাউন্ড থেকে মাউশি অধিদপ্তরের সহায়তায় ১২-১৬ বছর বয়সী বা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী কিংবা সমপর্যায়ের বিদ্যালয়গামী ও বিদ্যালয় বহির্ভূত সকল শিশুকেও বিদ্যালয়ে উপস্থিতির মাধ্যমে কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করানো হচ্ছে।
২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাফল্য তুলে ধরেন মহাপরিচালক। তিনি জানান, সারা দেশের প্রায় ১,২০,০০০ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সরকারি, বেসরকারি, ফরমাল, নন-ফরমাল স্কুল, মাদ্রাসা, মক্তব) এবং প্রায় ৩৩,০০০ মাধ্যমিক পর্যায়ের (বিদ্যালয়, মাদ্রাসা) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই কর্মসূচীর আওতাভূক্ত।
শিশুদের মাঝে ঔষধ সেবনের হার প্রত্যেক রাউন্ডেই ৯৫-৯৮% রয়েছে । শিশুদের মল পরীক্ষায় কৃমির উপস্থিতি ৮০% (২০০৫) থেকে ৭.৯৫% (২০১৮-১৯) নেমে এসেছে।
অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, এবারে ১ম ধাপে ঔষধ সেবনকারী শিশুর কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ ।
তিনি বলেন, কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উল্লেখিত হার অব্যাহত থাকলে এবং দেশের সকল শিশুকে পরিস্কার-পরিছন্নতা বিষয়ে শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে প্রতিটি ঘরে আমরা কৃমি মুক্ত শিশু দেখতে পাব যা সুন্দর ও সুস্থ জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি