logo
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:৪৫
বগুড়ায় বারোমাসি কার্টিমন আম চাষ, স্বপ্ন বুনছেন আম চাষি
এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া

বগুড়ায় বারোমাসি কার্টিমন আম চাষ, স্বপ্ন বুনছেন আম চাষি

আম চাষি আব্দুল করিম সাকিদার

এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া: বগুড়ায় বারোমাসি কার্টিমন আম চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের কোদলাপাড়া এলাকার বাণিজ্যিক আম চাষি আব্দুল করিম সাকিদার। ফল চাষ করেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব এমন বিশ্বাস থেকেই যত্ন করে গড়ে তুলেছেন আম বাগান। জৈষ্ঠ্য মাস আসতে এখনো অনেকদিন বাকি।

 

ইতিমধ্যেই তার কার্টিমন জাতের গাছে গাছে দুলছে বিভিন্ন সাইজের আম। নতুন জাতের এই আমের ভারে নুইয়ে পড়েছে গাছগুলো। মাত্র ১০ মাস বয়সেই ফল ধরেছে গাছে। এরই মাঝে তিনি দুই দফা কাঁচা ও পাকা আম বিক্রি করেছেন বাজারে।

 

চাষি আব্দুল করিম সাকিদার ভোরের আকাশকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমের বাগান করার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন থেকেই বাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে ১৬০টি আমের চারা রোপণ করি। এক বিঘা জমি প্রস্তুত করা, চারা লাগানো ও জমির চারপাশ নিরাপত্তাসহ খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৫শ টাকা। রাজশাহীতে গিয়ে এক নার্সারি থেকে ১৫০ টাকা পিস হিসেবে চারা সংগ্রহ করি।

 

১০ মাস বয়সে প্রতিটি গাছে সর্বোচ্চ তিন থেকে ১০ পিস আম ধরেছে। প্রথমে ১০ মাস বয়সে ৩শ টাকা কেজি দরে কিছু আম বিক্রি করেছি। দ্বিতীয়বার ৪০ কেজি আম বিক্রি করি। বর্তমানে প্রতি মণ আমের মূল্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ১৫ থেকে ২০ দিন পরে আরো প্রায় ৩৫ কেজি আম বিক্রি হবে হলে আশা করছি। দুই বছরের মধ্যে আম বাগানের সম্পূর্ণ খরচ উঠে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

 

দুই বছর পর তেমন কোনো খরচ হবে না। কারণ একটি আম গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ফল দিবে। এই ২০ বছর সম্পূর্ণটাই লাভ হবে। আম ধরার পাশাপাশি অনেক গাছেই নতুন করে মুকুল আসতে শুরু করেছে। কোনো কোনো গাছে আবার মুকুল থেকে আমের গুটিও দেখা দিয়েছে। তিনি এখন এলাকায় একজন সফল আম চাষি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

 

ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, বেকার সমস্যা সমাধান ও আর্থিক সমস্যা নিরসনে কৃষি আবাদের পাশাপাশি ফল চাষ একটি লাভজনক বাণিজ্যিক চাষ। উপজেলায় কৃষি বিভাগ থেকে নতুন জাত বারোমাসি কার্টিমন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বারোমাসি আম বাজারজাত করে চাষিরা ভালো দাম পেতে পারেন।

 

শুধু আব্দুল করিমই নন, এ ছাড়াও জেলার গাবতলী, শাহজাহানপুর, শেরপুর উপজেলায় বারী-১১, কার্টিমন ও সুইট কার্টিমন জাতের আম চাষ দিন দিন বেড়েই চলছে। এ ছাড়া জেলায় ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকেই এসব আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

 

বারী-১১, কার্টিমন ও সুইট কার্টিমন এই তিন জাতের আমের ২০০টি গাছ লাগিয়েছেন গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের আম চাষি আব্দুল্লাহ আল রুহানী। তার বাগানের গাছে গাছে আম ঝুলছে। কোনোটি খালি ডালে ঝুলছে, কোনোটি আবার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।

 

রুহানী জানান, মুকুল আসার পর চার মাসে আম পাকা শুরু হয় এবং প্রতিটি গাছে ১০ কেজি আম পাওয়া যায়। তার বাগানের আম পাকা শুরু হয়েছে। ৫০০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রিও শুরু করছেন বলে জানান এই আম চাষি। আমগুলো কাঁচা ও মিষ্টি। অনেকেই তাই কাঁচা-মিঠা আম বলে থাকে। এ ছাড়াও এই আম অন্য জাতের আমের চেয়ে মিষ্টি ও সুস্বাদু।

 

বগুড়া কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. এনামুল হক ভোরের আকাশকে জানান, বারোমাসি আমগুলো থাইল্যান্ডের জাত। প্রথমে সরকারি পর্যায়ে এই গাছের চারা আমদানি করা হয়েছিল। পরে দেশেই হর্টিকালচারে চারা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়েও চারা তৈরি করছেন অনেকে।

 

তিনি জানান, এসব জাতের চারা রোপণের এক বছর পর থেকেই আম ধরতে থাকে। বছরে একটি গাছে তিনবার আম ধরে। আম গাছের উচ্চতার ওপর ফলন নির্ভর করে। তবে প্রথম বছরেই প্রতিটি গাছে ১০-১২ কেজি আম হয়ে থাকে।

 

বগুড়ায় এই জাতের আম বাগান সবচেয়ে বড় শেরপুর ও গাবতলী উপজেলায়। তবে এই জাতের আমের শুধু বাগান নয়, ব্যক্তি পর্যায়েও এখন লোকজন বাড়িতে এই জাতের আম গাছ রোপণ করছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

 

বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে এইরকম লাভবান আমচাষে এখন এগিয়ে আসছে বগুড়া অঞ্চলের চাষিরা।

 

ভোরের আকাশ/নি