logo
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:৪৫
পুঁজিবাজারে আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

পুঁজিবাজারে আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেশের পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধস নামে ২০১০ সালে। তখন বাজারের শতভাগ শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেলে বিনিয়োগকারীদের দুর্দিন নেমে আসে। পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন তারা। সর্বস্ব হারিয়ে আত্মহত্যা করার খবরও পাওয়া গেছে। এরপর পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

 

গত বছরও বেশিরভাগ সময় পুঁজিবাজারে বড় পতন দেখা গেছে। তবে সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। এতে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে তারা পুঁজিবাজারে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। যার জের ধরে লেনদেন ও সূচকের উন্নতি দেখা যাচ্ছে।

 

গতকালও পুঁজিবাজারে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনে বড় উন্নতি দেখা গেছে। এদিন মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন ছাড়িয়ে গেছে ৯০০ কোটি টাকার। গত কয়েকদিন ধরে বাজারে এই ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৮২ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৩৭২ এবং ২২১৫ পয়েন্টে।

 

একইভাবে ডিএসইতে গতকাল ৯০০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ২৬ শতাংশ বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার।

 

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৫৩০ পয়েন্টে। সিএসইতে গতকাল ২১৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ৩৭টির এবং ১০৩ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে আজ ৪২ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, টানা পতনে আমাদের বেশ লোকসান হয়েছে। বাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় আমরা আবারো আশাবাদী হয়ে উঠেছি। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ এর আগে বহুবার এমন ধারায় এসে আবারো পতনের মুখে ফিরে গেছে বাজার। সে জন্য বাজার ভালো হলেও আমরা উচ্ছ¡সিত হতে পারিনি।

 

এখন বাজারে যে পরিবেশ রয়েছে, এ পরিবেশ থাকলে আমরা লোকসান পোষানোর সুযোগ পাব। আশা করি, এবার অন্তত তা হবে না।

 

বাজারচিত্রে দেখা যায়, চলতি মাসে (গতকাল পর্যন্ত) ডিএসইর লেনদেন বেড়েছে পাঁচগুণের বেশি। মাসের শুরুতে লেনদেন ছিল ১৭৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ তা বেড়ে হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। একইভাবে এ সময়ে বাজার সূচক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই সময়ে ৬ হাজার ১৯৫ থেকে সূচক বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ২৮১। বেড়েছে বাজার মূলধনও। মূলত বাজারের সবগুলো সূচক ইতিবাচক থাকায় বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরাও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তাদেরও প্রত্যাশা, বাজারে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিচলিত হয়ে পড়েন। ফলে পেনিক সেল বেড়ে যায়। তাই পতন নেমে আসে। তাদের অবশ্যই এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে বাজার পরিস্থিতিতে আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

 

একই বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে এখন বেশিরভাগ শেয়ারই ক্রয়যোগ্য। তারপরও বাজারের পতন একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মানিয়ে নেয়া জরুরি। বিনিয়োগকারীরা যদি কোনো কারণে ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, তাহলে এমনিতেই পতন নেমে আসে। বেশ কিছুদিন ধরে পতন থাকার পর বর্তমানে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এটা ভালো লক্ষণ। তবে বাজার ঠিক রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি