logo
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:২৪
একই পরিবারে যুগলবন্দি প্রতিভা
বাবলুর রহমান বারী, রংপুর ব্যুরো

একই পরিবারে যুগলবন্দি প্রতিভা

বড় ছেলে বাজাচ্ছেন তবলা, ছোট ছেলে বাজাচ্ছেন দোতরা এবং তাদের পিতা মন্ত্রমুগ্ধের সুর তুলছেন বাঁশিতে।

বাবলুর রহমান বারী, রংপুর ব্যুরো: রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার চা বিক্রেতা শংকর দাসের পরিবারের অসাধারণ প্রতিভা থাকার পরও অর্থাভাবের কারণে বিকাশ ঘটাতে পারছেন না তারা।

 

সংসার চালাতে কষ্টের যেন শেষ নেই তাদের। তবুও সব কষ্ট পেছনে ফেলে কাজের ফাঁকে আনন্দ খুঁজে পান বাঁশি ও বাদ্যযন্ত্রের চর্চার ভেতরে। মিঠাপুকুর উপজেলার ৪নং ভাংনী ইউনিয়নের মাটিয়া খোল গ্রামের মৃত খগেন চন্দ্র দাসের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে শংকর চন্দ্র দাস। পরিবার পরিজন নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন ছোট্ট একটি ঘরে। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ছোট পরিসরে জায়গা ভাড়া নিয়ে দিয়েছেন চা ও পানের দোকান।

 

পরিবারের সবাই শ্রম দেন এই দোকানে। বড় ছেলে শয়ন চন্দ্র দাস ৮ম শ্রেণির ছাত্র, সে বাজায় তবলা আর ছোট ছেলে নয়ন চন্দ্র দাস ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র, সে বাজায় দোতরা। আর পিতা শংকর চন্দ্র দাস মধুর সুর তোলেন বাঁশিতে। শংকর দাস ও তার স্ত্রী কাজলী রানী অতিক্রম করেনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চৌকাঠ। অর্থাভাবে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করতে না পেরে হাতের তৈরি বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে সন্তানদের স্বপ্ন পূরণে স্বামী-স্ত্রী দিয়ে যাচ্ছেন উৎসাহ। তাদের বাঁশি ও বাদ্যযন্ত্রের সুরে মোহিত হয়ে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা, ভিড় করেন শংকর দাসের বাড়িতে।

 

কথা হয় শংকর চন্দ্র দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, শত অভাব ও দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন সন্তানদের। সন্তানদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সরকার ও সাংস্কৃতিক মহলের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বড় ছেলে শয়ন চন্দ্র রংপুর বেতারে অডিশনে অংশগ্রহণ করবে বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রতিবেদকের কাছে।

 

মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নজরুল ইসলাম চাঁদ বলেন, আমি শংকর দাসের পরিবারকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। অসম্ভব প্রতিভা নিয়ে অজপাড়াগায়ে পড়ে আছেন তারা। দারিদ্র্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভালো যোগাযোগ না থাকার কারণে তাদের প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে না। আমি চাই তাদের এই প্রতিভা বিকশিত হোক।

 

কথা হয়, রংপুর শিল্পকলা একাডেমি ভবনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ বেতার রংপুরের প্রবীণ কণ্ঠশিল্পী রুপু মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে শংকর দাসের বাবাও ছিলেন একজন কণ্ঠশিল্পী। আমি শয়ন চন্দ্র দাস ও নয়ন চন্দ্র দাসসহ তাদের বাবার অসামান্য প্রতিভাগুলোকে ধরে রাখার জন্য এলাকার গুণীজন ও বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সরকার বাহাদুরের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বিনীত আহব্বান করছি।

 

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, সহযোগিতা পেলে ভালো মানের শিল্পী হবে শংকর দাসের দুই সন্তানের এমন প্রত্যাশা এলাকার সবার।

 

ভোরের আকাশ/নি