বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে কঠিন প্রভাব পড়েলেও সাম্প্রতিক সময়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের সবচেয়ে বড় উৎস এই প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনায় শ্রমবাজারে বিপর্যয় নেমে এসেছিল ঠিকই। তবে দীর্ঘ স্থবিরতা কাটিয়ে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে শ্রমিকদের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে কর্মরত শ্রমিকদের।
সৌদি আরবে ‘দ্য লাইন’ নামে দূষণমুক্ত যে শহর তৈরি হচ্ছে, সেখানে কাজ করছে বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন-পুরোনো মিলে অনেক দেশে প্রশিক্ষিত কর্মী যাওয়ায় বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এদিকে মালয়েশিয়ার কাক্সিক্ষত শ্রমবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটার আভাস মিলেছে। গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে ইতালি ও গ্রিস নতুন করে কর্মী নেয়া শুরু করেছে।
২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে অন্তত ৬ হাজার ৬০০ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, গ্রিসে বৈধভাবে চার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাবেন। নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারগুলোর একটি মালয়েশিয়া।
এটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ২০০৬ ও ২০০৭ সালের পর মালয়েশিয়ায় ভুয়া কোম্পানি দেখিয়ে, ভুয়া পারমিট দেখিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক এনে এবং সাগর ও আকাশপথে অবৈধভাবে লোক এনে মালয়েশিয়ায় অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হলে দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা বন্ধ রেখেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমে জিটুজি পদ্ধতিতে লোক প্রেরণ করে তখন মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে কোনো জনশক্তি রপ্তানিকারক সংশ্লিষ্ট ছিল না।
একটা দাবি ছিল, তাদের যেন সুযোগ দেয়া হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে জিটুজি প্লাস অর্থাৎ বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকরাও সুযোগ পেয়েছে। এ বাজার আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। মালয়েশিয়ার বাজার দ্রুত খোলা জরুরি। সরকার মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। আর এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও অধিক কর্মসংস্থান।
বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ ভোগ করছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ তরুণ। এদের শ্রমকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম ক্ষেত্র হলো রেমিট্যান্স। জনশক্তি রপ্তানি এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। সৌদি আরব, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার যাতে প্রসারিত হয় এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
২০১৮ সাল থেকে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া, সুদান, উগান্ডা এবং জাম্বিয়া বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়ে আসছে। সেসব প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা দেশগুলোতে সহজ শর্তে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্পপণ্য, কৃষিজ খাদ্যশিল্প এবং তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগে মনোযোগ দিতে পারে। এসব দেশে আমাদের বড় কর্মসংস্থানের বাজার তৈরির সুযোগ হতে পারে। এজন্য জোরালো ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি