সৈয়দপুর রেলস্টেশনে ৩ দিন অবস্থান করে ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ মন কেড়েছে বিভিন্ন বয়সি মানুষের। রেলওয়ের শহর সৈয়দপুরে ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ নতুন করে দেখিয়ে দিয়ে গেল ইতিহাস। উত্তরবঙ্গে শীতের দিনের ধূসরতা ম্লান করে দিয়েছে রেল কোচে স্থাপিত জাদুঘরটি।
সবাই ভিড় করে সেলফি, গ্রুপ ছবি তোলাসহ কোচের ভেতরে ঢুকে দেখেছেন, শুনেছেন আর জেনেছেন ইতিহাস, ঐতিহ্য আর রেলওয়ের ব্যতিক্রমী কীর্তি। উজ্জ্বল রঙে রাঙানো এই ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’টি নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতেই এই প্রয়াস।
স্থিরচিত্র, রেপ্লিকা ও ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে পুরো কোচ। সেটি ছিল পরিপাটি করে সাজানো ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেটিতে ঢুকলেই কানে আসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। দরজার পাশে মুজিব শতবর্ষের লোগো। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আন্দোলন-সংগ্রামকে ফুটিয়ে তুলেছে ভিডিওচিত্র।
জাদুঘরটিতে রাখা হয়েছে জাতির পিতার টুঙ্গিপাড়ার বাড়ির আলোকচিত্র, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি। আছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা, দলীয় প্রতীক নৌকা, মুজিব কোট, তামাকের পাইপ, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আলোকচিত্র, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের রেপ্লিকা।
জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। রেলকোচের ছোট্ট পরিসরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের আদলে তৈরি করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন বুকশেলফ। সেখানে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর লেখা বিভিন্ন বই এবং তার কর্মময় জীবনের ওপরে লেখা বিভিন্ন লেখকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই। শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’।
সোমবার সকালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে ভ্রাম্যমাণ এই রেল জাদুঘর সৈয়দপুরে এসে পৌঁছায়। স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পূর্ব দিকে রেখে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রদর্শনের জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ছিল সৈয়দপুর রেলস্টেশনে। সকাল আটটা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
সৈয়দপুরের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের ইতিহাস জানতে উৎসুক জনতা ও সাধারণ কৌতূহলী মানুষ অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আন্তরিকতার সঙ্গে জাদুঘরটি পরিদর্শন করেন। তারা ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যান ইতিহাসের মাঝে, অবলোকন করেন অতীত, সমৃদ্ধ করেন জ্ঞানভাণ্ডার, শানিত করেন দেশপ্রেম ও চেতনাকে।
ভোরের আকাশ/আসা