logo
আপডেট : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:২৬
প্রতারণা করে ফাতেমা দোজার আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা, তদন্তে মন্ত্রণালয়
এম বদি-উজ-জামান

প্রতারণা করে ফাতেমা দোজার আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা, তদন্তে মন্ত্রণালয়

এম বদি-উজ-জামান: জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে এবার প্রতারণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (আমেরিকা) যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগের তদন্তে নেমেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যেই ডা. ফাতেমা দোজাকে চিঠি দিয়ে ওই অভিযোগের জবাব জানতে চেয়েছে।

 

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ডা. ফাতেমা দোজা আরএসএনএর আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা সাত কর্মদিবসের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান উপসচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডা. ফাতেমা দোজাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

 

জানা যায়, গত বছর ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে রেডিওলজি সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার (আরএসএনএ) ১০৮তম বার্ষিক সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ পান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা।

 

ডা. ফাতেমা দোজা বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং ফ্যাকালটির সদস্য সচিব এবং রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং সোসাইটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হওয়ার কারণে এই আমন্ত্রণ পান বলে জানা যায়। এজন্য তাকে ১৮ নভেম্বর আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় আরএসএনএ থেকে। ওই আমন্ত্রণপত্রে ডা. ফাতেমা দোজার আমেরিকা যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ নিজের বহন করার কথা বলা হয়।

 

কিন্তু ওই আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর তিনি বিদেশে যাওয়ার অনুমতির জন্য নিজ বিভাগে তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের সঙ্গে আরএসএনএর দেয়া আমন্ত্রণপত্র সংযুক্ত করা হয়। এই আমন্ত্রণপত্রে কারচুপির আশ্রয় নেন ডা. ফাতেমা। আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করে দাখিল করেন। পরিবর্তিত আমন্ত্রণপত্রে দেখানো হয়, আমেরিকা যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করবে আরএসএনএ।

 

এই আমন্ত্রণপত্র সন্দেহজনক হলে তা খতিয়ে দেখতে আমেরিকায় যোগযোগ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর পরই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। আরএসএনএ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে সঠিক তথ্য জানিয়েছে। এটা জানার পরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন/জালিয়াতি করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় উপসচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে।

 

এর পর গত ১৫ ডিসেম্বর কারণ দর্শাতে ডা. ফাতেমা দোজাকে চিঠি দেন মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

 

এর আগে ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়ার তথ্য গোপন করে ও কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যম গত ১০ বছর চাকরিতে বহাল থাকা, পদোন্নতি এবং সরকারি সব সুবিধা গ্রহণের অভিযোগের তদন্ত করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমন অবস্থায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, অভিজ্ঞ এবং সিনিয়রদের বাদ দিয়ে ডা. ফাতেমা দোজা বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) এফসিপিএস এবং এমসিপিএস রেডিওলজি ও ইমেজিং কোর্সের পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, বাছাই, লিখিত পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণ করা এবং মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের কাজ করেন।

 

ডা. ফাতেমা দোজা কর্তৃক রেডিওলজি কোর্সের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক এবং বিসিপিএসে কর্মরতদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি