logo
আপডেট : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:৩৬
বাণিজ্যমেলা পরিণত হয় গ্রাম্যমেলায়
গাড়ি পেতে অব্যবস্থপনার শিকার দর্শনার্থী ও ক্রেতারা
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

বাণিজ্যমেলা পরিণত হয় গ্রাম্যমেলায়

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দ্বিতীয়বারের মতো রূপগঞ্জের পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। একটু একটু করে মেলা জমতে জমতে শুরু করলেও সন্ধ্যার পর বদলে যায় চিত্র। রূপ হারিয়ে বাণিজ্যমেলা যেন পরিণত হয় গ্রাম্যমেলায়। গত বছর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশের মাঠ থেকে বাণিজ্যমেলা সরিয়ে নেয়া হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে।

 

বাণিজ্যমেলা সরিয়ে নেয়ার কিছু কারণের মধ্যে একটি ছিল যানজট নিরসন। কারণ এ সময়ে মাসজুড়ে আগারগাঁও এলাকায় যানজট লেগে থাকত, যার রেশ পড়ত পুরো রাজধানীতে। এখন এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেলেও তৈরি হয়েছে ভিন্ন পরিস্থিতি। রাজধানীর বাইরে ভিন্ন জেলায় মেলা অনিুষ্ঠিত হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন দর্শনার্থীরা। মেলার ভেতরে আলো ঝলমলে পরিবেশ থাকলেও বাইরে ভিন্ন চিত্র। মেলার সামান্য দূরেই অন্ধকার, গ্রাম্য পরিবেশ। মেলার পাশেই বিআরটিসি গাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা থাকলেও নেই প্রাইভেট পরিবহনের সুব্যবস্থা নেই। যারা এ ধরনের গাড়ি খোঁজেন, তাদের মেলা থেকে বেশ দূরে আসতে হয়। যার অনেকটা এলাকাজুড়ে পর্যাপ্ত আলো নেই। গা-ছমছমে ভ‚তুডে পরিবেশ। দর্শনার্থীদের মনে থাকে বিপদের আশঙ্কা।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে লুৎফর রহমান নামে এক দর্শনার্থী ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এ বছর মেলায় প্রথম আসলাম। আসার আগে যেমন ভেবেছিলাম এসে দেখলাম তার ভিন্ন চিত্র। প্রথমত, মেলা হচ্ছে ঢাকা থেকে অনেক দূরে, একেবারে গ্রামের মধ্যে। এখানে আসতে গেলে পুরো দিন লেগে যায়। এত দূরে পরিবার নিয়ে আসা দুষ্কর। কারণ সন্ধ্যার পর এলাকাটা অন্যরকম হয়ে যায়।

 

মেলা থেকে কিছু দূরে এলেই গ্রাম্য নির্জনতা। এটা ভয়ের কারণ। একসময় হয়তো এটা ঠিক হবে। তবে এখন নিরাপত্তার অভাববোধ করছি। আমার মনে হয়, আর একটু সময় বাণিজ্যমেলা সরিয়ে আনা উচিত ছিল। এদিকে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় ভিড় ছিল। রাজধানীর ভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছিলেন দর্শনার্থীরা। ছিল স্থানীয়দের ভিড়। মেলার ভেতরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরটা দর্শনার্থীতে পূর্ণ।

 

বেশিরভাগ পণ্যের দোকানে রয়েছে মানুষের সরব উপস্থিত। তারপরও বিক্রেতারা বলছেন, মেলায় তেমন বিক্রি নেই। মেলা ঢাকার মধ্যেই ভালো ছিল। তারা বছেন, ছুটির দিন বলে মেলা জমেছে। অন্যদিন জমে না। মেলা শেষের দিকে, কিন্তু আমাদের কেনাবেচা নেই। এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে পূর্ব পাশের জোনে দেখা গেছে, মেয়েদের চাদর, ব্যাগ, জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দোকানে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি। সবচেয়ে বেশি ভিড় রয়েছে বিদেশি পণ্যের দোকানে। নানা রং, নানা ডিজাইনের শাল চাদর ব্যাগ জুতা স্থান পেয়েছে এসব দোকানে। মেলায় মানুষজনের ব্যাপক থাকলেও বিক্রেতারা একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তারা বলছেন, এত মানুষ থাকলেও সবাই শুধু দেখতে আসছে। কিনছে কম।

 

এক্সিবিশন সেন্টারের বাইরে একেবারে পূর্ব পাশে রয়েছে ছেলেদের ব্লেজারের দোকান। তবে সেখানে মেয়েদের দোকানের মতো এত ভিড় নেই। প্রতিটি দোকানে হাতেগোনা কয়েকজন দর্শনার্থী আছেন। একটি ব্লেজার দোকানের কর্মী রাসেল বলেন, এখন আর ছাড় দিয়েও মানুষকে বেøজারের দোকানে আনা যায় না। আগারগাঁওয়ে যখন ছিল, তখন বেশ ভালো বিক্রি হতো। এখন তো নিজে দেখতে পাচ্ছেন কী অবস্থা। হয়তো শেষের দিকে একটু বিক্রি হতে পারে।

 

একইভাবে মেলায় খাবারের দোকানগুলোয় তেমন ভিড় নেই। মাইকে ডেকেও পাচ্ছে না কাঙ্খিত কাষ্টমার। দোকানিরা জানান, আগে মেলায় খাবারের দোকানে ভিড় লেগেই থাকত। বেশিরভাগ খাবার খেতে বিত্তবানরা। ঢাকা থেকে দূরে হওয়ায় তারা এখানে আসছে না। যে কারণে সবারই ব্যবসা মন্দা। অন্যদিকে মেলা শেষ করে ফেরার পথে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের হতে হচ্ছে অব্যবস্থপনার শিকার। টিকিট কেটে বিআরটিসি গাড়িতে উঠতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেড়-দুই ঘণ্টা।

 

পর্যাপ্ত সিকিউরিটি না থাকায় এখানে চলছে হুড়াহুড়ি। শুরু হচ্ছে দৌড় প্রতিয়োগিতা। যিনি আগে যেতে পারছেন তিনিই উঠতে পারছেন গাড়িতে। ফলে শিশু এবং বাচ্চারা সমস্যায় পড়ছেন। জানতে চাইলে মিরপুর থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে এসে সমস্যায় পড়েছি। প্রাইভেট গাড়ি নেই, পাবলিক গাড়িতে ওঠার জন্য ১ ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করছি, কিন্তু উঠতে পারছি না।

 

এখানে নিয়ম বলে কিছু নেই। মেলা এখানে আনার আগে আরো অনেক বিষয় ভাবা দরকার ছিল’। একই বিষয়ে রাসেল নামে এক কিশোর বলেন, ঢাকার বাণিজ্যমেলা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে এ যেন পাকিস্তানের ক্রিকেট দুবাই অনুষ্ঠিত হওয়ার অবস্থা। ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স’ (বিসিএফইসি) নামের চীনের সহায়তায় ৭৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

 

এ প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণখালীর বাগরাইয়াটেকের (পূর্বাচল) ২০ একর জায়গার ওপর বাস্তবায়ন হয়। বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, চীন সরকার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘চাইনিজ স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি