logo
আপডেট : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:৩৪
রমজান সামনে রেখে আগাম সতর্কতা
ভারত থেকে নিত্যপণ্যের আমদানি নিশ্চিত করতে চায় সরকার
মো. রেজাউর রহিম

ভারত থেকে নিত্যপণ্যের আমদানি নিশ্চিত করতে চায় সরকার

মো. রেজাউর রহিম: বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চাহিদানুযায়ী দেশের বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি উত্তরণ না হওয়া এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের প্রাপ্তি ও আমদানির অনিশ্চয়তা দূর করতে ভারতের কাছে আমদানি কোটা সুবিধা বৃদ্ধি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

 

বিষয়টি নিয়ে ভারতকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং আলোচনাও হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া সামনে রমজান মাস থাকায় বাজারে যাতে নিত্যপণ্যের সংকট না হয়, সেজন্য আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চাহিদানুযায়ী পণ্যের ঘাটতি থাকায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, গম, আদা ও রসুন এই অত্যাবশ্যকীয় সাত নিত্যপণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের কাছে বাংলাদেশের চাওয়া বার্ষিক কোটা সুবিধা বাড়াতে চেষ্টা করছে সরকার। গত ডিসেম্বর মাসে এই পণ্যগুলো বাংলাদেশে নিয়মিত রপ্তানি করার বিষয়ে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে স্থায়ীভাবে বার্ষিক কোটা সুবিধার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিকে এ প্রস্তাব দেয়ার পর গত ২২-২৩ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়।

 

আর ভারত সরকারকে এ বিষয়টি ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ওই বৈঠকে এ প্রস্তাবের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনার আশ্বাস দেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে তাদের ইতিবাচক সম্মতির কথাও জানান তখন। জানা গেছে, দেশের চাহিদা মেটাতে ও পণ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ভারতের কাছে কোটা সুবিধার আওতায় প্রতিবছর ২০ লাখ টন চাল, ৪৫ লাখ টন গম, ১৫ লাখ টন চিনি, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ১ লাখ ২৫ হাজার টন আদা, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল এবং ১০ হাজার টন রসুন আমদানি প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাবে দেশটিকে এ পরিমাণ পণ্য প্রতি বছর বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য সংরক্ষিত রাখতেও অনুরোধ জানানো হয়।

 

তবে ভারত সরকার এসব নিত্যপণ্য বাংলাদেশে রপ্তানিতে রাজি হলেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বার্ষিক কোটা সুবিধার আওতায় পণ্যগুলোর পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তুলেছে বলে জানা গেছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বৈশ্বিক আমদানি পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ প্রতিবছরের জন্য যে পরিমাণ পণ্যের কোটা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে, সে পরিমাণটা অনেক বেশি। যা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রয়োজন নাও হতে পারে।

 

এ ছাড়া এর আগে কখনো এত বিপুল পরিমাণ পণ্য ভারত থেকে আমদানিও করেনি বাংলাদেশ। অন্যদিকে বর্তমানে বিশ^ব্যাপী পণ্য সংকট থাকায় বাংলাদেশ এখন এই কোটা সুবিধা চাইলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং নিজ দেশে উৎপাদন বাড়লে ভবিষ্যতে এ পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশের আমদানির প্রয়োজন নাও হতে পারে বলে মনে করছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে ভারত সরকার বাংলাদেশকে কোটা সুবিধা দিতে সম্মত হলেও বাংলাদেশের প্রস্তাবিত আমদানি কোটা সংশোধন করে আবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে।

 

আর এ বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, দেশে নিত্যপণ্যের ঘাটতি মেটাতে এবং সংকটকালীন সময়ে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভারত সরকারের কাছে বার্ষিক কোটা বৃদ্ধি করে নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে দেশটির পক্ষ থেকে আমাদের পাঠানো প্রস্তাবটি আরো পর্যালোচনার জন্য বলা হয়েছে। এ অবস্থায় আগের প্রস্তাবে দেয়া সাত নিত্যপণ্যের জন্য প্রস্তাবিত বার্ষিক কোটা নতুন করে নির্ধারণ ও সংশোধনপূর্বক দেশটির কাছে পাঠানো হবে।

 

তিনি বলেন, দেশে নিত্যপণ্যের প্রয়োজন মেটাতে সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য আমদানি প্রস্তাবের বিষয়ে কাজ চলছে। এ ছাড়া ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকেও প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানির বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আগের প্রস্তাবিত কোটা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর বার্ষিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, আমদানির পরিমাণ ও মজুতের গত ১০ বছরের পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সামনে রমজান মাস থাকায় বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব পণ্যের উৎপাদন ঘাটতি থাকায় আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকটময় পরিস্থিতিতে চাহিদানুযায়ী বৈশ্বিক বাজার থেকে এগুলোর সরবরাহ পাওয়াও আমদানিকারকদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সামনে রমজান মাসে যাতে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেজন্য আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার।

 

ভোরের আকাশ/নি