logo
আপডেট : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:৫৯
এক প্লান্টে তৃষ্ণা মিটছে ২০ হাজার মানুষের
মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট

এক প্লান্টে তৃষ্ণা মিটছে ২০ হাজার মানুষের

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট: বাগেরহাটে কচুয়ায় একটি প্লান্টের পানিতে তৃষ্ণা মিটাচ্ছেন অন্তত ২০ হাজার মানুষ। সেইসঙ্গে কচুয়া উপজেলা সদরের অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মকর্ত চাকুরীজীবী ও ব্যবসায়ীরাও এ প্লান্টের পানি পান করছেন, কেউ কেউ রান্নার কাজেও ব্যবহার করেন এ পানি। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ প্লান্ট থেকে নিয়মিত পানি পাচ্ছেন কচুয়া উপজেলা সদরের বাসিন্দারা। তবে উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ায়, এ পানি পায় না উপজেলা সদরের বাইরের লোকজন। উপজেলার সব এলাকায় সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে পানি সরবরাহের জন্য আরো প্লান্ট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কচুয়া উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে কচুয়া উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পানি শোধনাগার ও ট্যাংকি স্থাপন করা হয়। প্রতি ঘণ্টায় ৩০ হাজার লিটার পানি শোধন করার সক্ষমতা রয়েছে এ প্লান্টের। পুকুর ও খালের পানি স্যান্ড ফিল্টেশন পদ্ধতিতে শোধন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এ পানি সরবরাহ করা হয় প্রায় চারশ পরিবারের মাঝে।

 

এর মধ্যে উপজেলা সদরে অবস্থিত বিভিন্ন অফিস ও কচুয়া বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। প্রায় ৫ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন থেকে পানি দেয়া হয় উপকারভোগীদের। এছাড়া বেশকিছু হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ প্লান্টের পানি খাবার ও রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তারা নির্দিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ফি জমা দেন এ পানির জন্য। এছাড়া বিনামূল্যে কলস ও বোতল ভরে পানি নিয়ে ব্যবহার করেন অনেকে। নির্মাণ শেষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্লান্টটিকে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্লান্ট পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে।

 

এ কমিটির তত্ত্বাবধানে তিনজন কর্মী এ প্লান্টের দেখভালের করেন। যারা নিয়মিত পানির ট্যাংকি ও শোধনাগার পরিষ্কার করেন। সেবাগ্রহিতাদের থেকে নেয়া টাকা দিয়ে এসব কর্মীদের বেতন ভাতা দেয়া হয়। সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিয়মিত তদারকিও করে। তবে এ সুপেয় পানির চাহিদা পূরণের জন্য আরো ট্যাংকি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম বুলু বলেন, একটা সময় কচুয়ায় পানির খুব সংকট ছিল। যার কারণে আমাদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হত। কিন্তু এখন ঘরে বসেই পানযোগ্য সাপ্লাইয়ের পানি পাই। মাসে সামান্য কিছু টাকা দিলেই হয়। এ পানি সরবরাহের ফলে আমাদের জীবন যাত্রা সহজ হয়েছে। এ প্লান্ট থেকে পানি নিয়ে বাজারে বিভিন্ন দোকানে দোকানে বিক্রি করা মতলেব শেখ বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে বিনামূল্যে পানি নিয়ে বিভিন্ন হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেই। এতে যা আয় হয়, তাতে সংসার চলে যায়।

 

কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদের মধ্য থেকে পাইপ লাইনে যে পানি দেয় তার মান খুবই ভালো। এ পানিই আমরা খাই। কচুয়া বাজারের মীর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মীর আল আমিন বলেন, আমাদের হোটেলসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে সাপ্লাইয়ের পানি খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাস্টমাররা এ পানি খেয়ে খুশি। কারো কোনো অভিযোগ নেই। পাম্প অপারেটর বাবুল কোটাল বলেন, আমরা তিনজন এ পাম্পের দেখাশুনা করি। প্রতি ১৫ দিন পরপর প্লান্ট ও বালু পরিষ্কার করি। সময়মত পানি সরবরাহ এবং পানি ওঠানোর কাজ করি আমরা। পানি সঠিক রাখতে আমরা সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করি।

 

সাইদ মীর নামে আরেক অপারেটর বলেন, আমরা মোটর চালানো ও বন্ধ করার কাজ করি। সেইসঙ্গে পাইপ লাইন দেখভালের কাজও করি আমরা। মতলেবের মতো শাহিদা বেগম নামে এক নারীও এ প্লান্ট থেকে পানি নিয়ে বিভিন্ন বাসা ও দোকানে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, এ প্লান্ট থেকে প্রতিদিন ৩৬ কলস পানি নেই। সেই পানি বাসা ও বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করি, যা পাই তাতেই কোনোমতে ভাত-কাপড় হয় আমার। কারো কাছে হাত পাতা লাগে না।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কচুয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রায়হান হোসেন বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করা হয় এ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। প্রথমে পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের রিজার্ভ ট্যাংকিতে নেয়া হয়, পরে স্যান্ড ফিল্টেশনের মাধ্যমে পরিষ্কার পানি ট্যাংকিতে ও সেখান থেকে সার্ভিস ট্যাংকিতে যায়। সার্ভিস ট্যাংকি থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায় আমাদের এ সুপেয় পানি।

 

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তাসমিনা খাতুন বলেন, এ প্লান্ট থেকে নামমাত্র মূল্যে উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। বিনামূল্যেও অনেকে প্লান্টের পাশের ট্যাব থেকে পানি নেন। কেউ কেউ এ প্লান্ট থেকে পানি নিয়ে বাজারে খাবার হোটেল মালিকদের কাছে বিক্রিও করেন। প্রতিদিন দেড় লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয় এ প্লান্ট থেকে। এরপরও উপজেলায় আরো পানির চাহিদা রয়েছে। আরো একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হলে আরো বেশি মানুষকে সেবা দেয়া যেত।

 

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, উপক‚লীয় অঞ্চল হওয়ায় বাগেরহাটের প্রতিটি উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করায় কচুয়া উপজেলা সদরে পানির সংকট অনেক কম। কচুয়া উপজেলাকে অনুসরণ করে অন্যান্য উপজেলায়ও এ ধরনের টেকসই প্লান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে চিতলমারী উপজেলায় প্লান্টের কাজ শুরু হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায়ও প্লান্ট স্থাপনের কাজ দ্রæত কাজ শুরু হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি