সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকে স্বীকৃতি দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে ব্যবহৃত সকল ফরমে অভিভাবকের ঘরে পিতা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেছেন, কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট ইনফরমেশন ফরমে (এসআইএফ) পিতার নাম লিখতে বাধ্য করা যাবে না। কেউ পিতার নাম উল্লেখ করতে না চাইলে মা বা বৈধ কোনো ব্যক্তি হবেন অভিভাবক। আদালত বলেছেন, কোনো শিক্ষার্থী ফরমে পিতার পরিবর্তে তার মা বা কোনো বৈধ অভিভাবকের নাম উল্লেখ করলে তা গ্রহণ করতে হবে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দিয়েছেন। সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং নারীপক্ষের করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আইনুননাহার সিদ্দিকা, অ্যাডভোকেট এস এম রেজাউল করিম এবং অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত জানান, এই রায়ের ফলে অভিভাবক হিসেবে পিতার নাম না লিখে কোনো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এসআইএফ পূরণ করলে তাকে অবশ্যই প্রবেশপত্র দিতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে পিতা, মা বা অন্য কোনো বৈধ অভিভাবকের নাম দিয়ে এসআইএফ সম্পন্ন করতে পারে সে জন্য সরকার আগেই উদ্যোগ নিয়েছে। এসআইএফ-এ শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পিতার নাম উল্লেখ করতে হবে এমন কোনো বিধান নেই।
রায়ের পর অ্যাডভোকেট আইনুন নাহার সিদ্দিকা জানান, এই রায়ের ফলে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের অধিকারও আংশিক প্রতিষ্ঠিত হলো। আর মাতা-পিতার পরিচয়হীন যেকোনো শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হলো।
হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পিতর নামসহ স্টুডেন্ট ইনফরমেশন (এসআই) ফরম পূরণ করতে না পারায় প্রবেশপত্র না দেয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুলে একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পিতা, মা বা বৈধ অভিভাবকের নাম পরিচয়ের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে এসআই ফরম সংশোধনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ওই শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র না দেয়া অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে গতকাল রায় দিলেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে, শুধু পিতার নাম না থাকলে একজন শিশু ফরম পূরণ করতে পারবে না, পাসপোর্ট পাবে না এটা ঠিক না। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে সমতার কারণে বাবা অথবা মায়ের পরিচয় থাকলেই যেকোনো ফরম পূরণ বা রেজিস্ট্রেশন পূরণ করার অধিকার পাবে।
আইনজীবীরা জানান, ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে পিতার নাম পূরণ করতে না পারার কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায় রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এরপর সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতির নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার সংগঠন যৌথভাবে রিট আবেদন দাখিল করে। মা ও সন্তানকে স্বীকৃতি না দিয়ে পিতার চলে যাবার পর ওই তরুণী তার মায়ের একার আদর স্নেহে বড় হয়েছিলেন।
ভোরের আকাশ/নি/আসা