যমুনার বিশাল জলরাশি পেরিয়ে বালুচরের বুকে টগবগিয়ে এখনো ছুটে চলে ঘোড়ার গাড়ি। কালের বিবর্তনে একসময়ের রাজকীয় পরিবহনটির রূপ বদলালেও এখনো তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি।
যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে উঁচুনিচু-আঁকাবাঁকা বালুময় পথে যাত্রী বা মালামাল গন্তব্যে পৌঁছে দেয় ঘোড়ার গাড়ি।
প্রকৃতিকন্যা যমুনার অভ্যন্তরের চরাঞ্চলে সড়কগুলো সবসময়ই উঁচুনিচু, বালুময় দুর্গম। নির্দিষ্ট কোনো সড়ক নেই এসব চরে। বিভিন্ন সময়ে সুবিধাজনক সড়ক বেছে নেন চরের মানুষ। এসব সড়কে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাতায়াত করেন তারা। দুর্গম এসব সড়কে মোটরসাইকেলেও যাত্রী পরিবহন করা হয়। তবে ভাড়া অনেক বেশি হওয়ায় মোটরসাইকেলে চলাচলকারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। আর পণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন একেবারেই অসম্ভব।
তবে সিরাজগঞ্জ জেলার বেশ কয়েকটি চরে পাকা সড়ক নির্মাণ হওয়ার ফলে কিছু আধুনিক যানবাহন (থ্রি হুইলার) চলাচল করতে দেখা যায়। কিন্তু যমুনার পাড় থেকে নৌকাযোগে আসা মালামাল কিংবা বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঝখান থেকে কৃষিপণ্য পরিবহনে এখনো একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনা নদীর অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে সরেজমিনে গেলে ঘোড়ার গাড়ির এমন অনেক দৃশ্যই দেখা যায়।
নদীর মহেশকাংলা নৌকাঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে নৌকাযোগে আনা মালামাল তুলে দেয়া হয়েছে ঘোড়ার গাড়িতে। নদীর তীর থেকে খাড়া ঢাল বেয়ে ঘোড়ার গাড়ি ওপরে উঠছে। এরপর ছুটে চলছে মাইলের পর মাইল। খানিকটা দূরে আরো একটি ঘোড়ার গাড়িকে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। এসব গাড়ি বিশাল উঁচু থেকে নিচু ঢাল, বালুময়, কিংবা ছোটবড় গর্তযুক্ত সব দুর্গম পথ অনায়াসেই পাড়ি দিতে পারে। যাতায়াত আর পণ্য পরিবহনে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চরাঞ্চলবাসীর অন্যতম যান হিসেবে চলছে ঘোড়ার গাড়ি।
৭০ বছর বয়সি ঘোড়ার গাড়ির চালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমরা চরের কৃষক। অনেক আগে থেকেই ঘোড়ার গাড়ি চালাই। আবাদের কাজের ফাঁকে ঘোড়ার গাড়ি চালাই।
বড় কয়ড়া গ্রামের আব্দুল গণি বলেন, আমার জমির ফসল ঘরে তোলা ও আর হাট-বাজারে নেয়ার জন্যই ঘোড়ার গাড়ি চালাই।
সয়াশেখা চরের কৃষক আব্দুল কাদের, সাইদুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, লালচাঁন মিয়াসহ অনেকেই জানান, বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে তাদের কৃষি জমি। এসব জমির ফসল ঘরে তুলতে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া সম্ভব নয়। আবার ঘোড়ার গাড়ি না পেলে মাথায় বা কাঁধে বোঝা নিয়ে আসতে হয়। এছাড়া শহর থেকে মালামাল আনতেও ঘোড়ার গাড়িই ভরসা।
কাওকোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জিয়া মুন্সী বলেন, যমুনার মধ্যবর্তী একটি ইউনিয়ন কাওয়াকোলা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গ্রাম হবে শহর। সেটা বাস্তবায়নে এখন চরের অনেক সড়কই পাকা হয়েছে। তবে নদী-তীরবর্তী বালুময় সড়কগুলোতে চলাচল বা পণ্য পরিবহনের জন্য একমাত্র যানবাহন ঘোড়ার গাড়ি।
ভোরের আকাশ/আসা