logo
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:২৪
তিন দিনের ছুটিতে জমজমাট কক্সবাজার
পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার
এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। ছবিটি শুক্রবার তোলা

এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ সব পর্যটন স্পটে বেড়েছে দেশীয় পর্যটক। তবে বিদেশি পর্যটকের আশানুরূপ দেখা মিলছে না অনেক দিন ধরে। সমুদ্রসৈকত, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়ায় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। আর বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়াতে কী করা প্রয়োজন, তা নিয়ে খতিয়ে দেখছে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গবেষণা সেল।

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।

 

গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পর্যটনবিষয়ক প্রকাশনা বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত তিন দিনব্যাপী পর্যটন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, কুতুবদিয়া-মহেশখালীর সৌন্দর্য গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রবালসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

 

প্রবাল দ্বীপও রাখতে হবে, সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্যও রাখতে হবে এবং পর্যটকও যেতে হবে। এ দুটির সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া অনেক সুন্দর। সেখানেও পর্যটক যেতে হবে। কুতুবদিয়া দ্বীপ ভারতের গোয়ার মতো মনে হয়। পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, কক্সবাজারের সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়ায় তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলো সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বিমানবন্দরকে আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকার কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কক্সবাজারের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটের বিষয়টি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। ফলে ক্রমবর্ধমান পর্যটনশিল্প আরো এগিয়ে যাবে। সরকার পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে।

 

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের অধিকাংশ মানুষের রোজগার পর্যটনশিল্পনির্ভর। সরকারি ছুটি কিংবা বিশেষ কয়েকটি দিনে পর্যটকের সমাগম তেমন হয় না। পর্যটক থাকলে সবকিছু চাঙ্গা থাকে আর পর্যটক না থাকলে সবকিছু ঝিমিয়ে পড়ে। এছাড়া বিদেশি পর্যটক তেমন একটা নেই। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কক্সবাজারে বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দুটি পয়েন্ট, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়ায় বিদেশি পর্যটক জোন করার সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

 

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প কক্সবাজারের প্রাণ। পর্যটক না থাকলে এর আর্থিক প্রভাব পড়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। সরকার বিদেশি পর্যটকের আকর্ষণ বাড়াতে পরিকল্পনা নেয়াটা এ শিল্পের জন্য খুবই ইতিবাচক। বিভিন্ন পর্যটন দ্বীপে অবাধে আসা-যাওয়ার পথ সহজ করলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।

 

আমরা চাই, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। কক্সবাজার সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ট্যুরিস্ট ডিপার্টমেন্ট প্রধান অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশ জানান, বছরের অধিকাংশ সময় কক্সবাজারে সন্তোষজনক পর্যটক থাকে, তবে তা দেশি পর্যটক। পর্যটন মন্ত্রণালয় যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা যথাযত বাস্তবায়ন হলে পর্যটনশিল্প আরো চাঙ্গা হবে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন আছে। নেতিবাচক প্রচারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 

চলতি পর্যটক মৌসুমে দেশি পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত কক্সবাজার। এ কারণে খোশমেজাজে আছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। গত ২৬ জানুয়ারি পূজা থাকায় দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। তার ওপর শুক্র, শনিবার সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের ছুটিতে জমজমাট কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে সব পর্যটন স্পট।

 

কক্সবাজার হোটেল অফিসার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, পাঁচ শতাধিক হোটেলের সবকটি হোটেলের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং। সব মিলিয়ে দেড় লক্ষাধিক পর্যটক এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল অ্যাসোশিসনের সভাপতি মুকিম খান জানান, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ভালো, তাই পর্যটকে মুখরিত এখন কক্সবাজার। সেবারমান ও বেড়েছে সবকটি হোটেলে।

 

সৌদিয়া চেয়ার কোচের (বাস) কাউন্টার ম্যানেজার আবু বক্কর জানান, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম টু ঢাকা মহাসড়কে শতাধিক কোম্পানির বিলাসবহুল গাড়ি চলাচল করছে, কোনো গাড়িতে কোনো সিট খালি নেই। প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটক ঢুকছেন কক্সবাজারে। তাছাড়া অসংখ্য পিকনিকের গাড়ি ও আসছে কক্সবাজারে।

 

ভোরের আকাশ/নি