logo
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:২৬
বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী কুপি-হারিকেন বাতি
বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ

বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী কুপি-হারিকেন বাতি

আগুন জ্বলিয়ে দিলে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে জ¦লতে থাকে কুপি, হারিকেন আবদ্ধ থাকে একটি কাচের জারের ভেতর।

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ: কালের বিবর্তনে আধুনিকতার সংস্পর্শে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় কুপি-হারিকেন বাতি। এই কুপি-হারিকেন বাতি শুধুই এখন স্মৃতি, কালের বিবর্তনে এসবের স্থান দখল করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব, চার্জার, চার্জার ল্যাম্প, চার্জার লাইটসহ আরো অনেক কিছুই। গ্রামীণ জীবনে অন্ধকার দূর করার একমাত্র অবলম্বন ছিল কুপি-হারিকেন বাতি। আবহমান গ্রামবাংলায় কুপি-হারিকেন বাতির মতো ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন আজ প্রযুক্তির কল্যাণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

 

মানিকগঞ্জ জেলা, উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এর কদর নেই বললেই চলে। এক সময় আবহমান গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এই কুপি-হারিকেন বাতি আলো দিত। যা এখন খুব কমই চোখে পড়ে। এই বাতিগুলো ছিল বিভিন্ন ডিজাইনের ও বাহারি রঙের।

 

এগুলো তৈরি হতো কাচ, মাটি, লোহা আর পিতল দিয়ে। গ্রামবাংলার মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী কুপি কিনে ব্যবহার করতেন। বাজারে সাধারণত অনেক ধরনের কুপি-হারিকেন পাওয়া যেত। বড় ও ছোট। বেশি আলোর প্রয়োজনে কুপি-হারিকেন বাতিগুলো কাঠ এবং মাটির তৈরি গাছা অথবা স্টান্ডের ওপর রাখা হতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রামে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় এসব বাতির কদর যেন হারিয়ে গেছে।

 

আগের দিনে বাতি জ্বালিয়ে রাতে গৃহস্থালির কাজ করত গৃহিণীরা, রাস্তায় চলাচলসহ উঠানে কিংবা বারান্দায় অথবা ঘরে পড়াশোনা করত ছেলেমেয়েরা, পুঁথি পাঠ, কেচ্ছা কাহিনির নানা গল্প হতো।

 

কুপি-হারিকেন বাতির কেরোসিন তেল আনার জন্য প্রতিটি বাড়িতেই ছিল বিশেষ ধরনের কাচের ও প্লাস্টিকের বোতল। সেই বোতলের গলায় রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো বাঁশের খুঁটিতে। এই কুপিবাতিগুলো ছিল বিভিন্ন ডিজাইনের ও বিভিন্ন রঙের।

 

গ্রামীণ সমাজের সন্ধ্যা বাতি ‘কুপি-হারিকেন বাতি’ এখন সোনালি অতীত স্মৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ না থাকলেও গ্রামবাংলার মানুষ ব্যবহার করছে সৌরবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন রকমের চার্জার। গ্রামবাংলার আপামর লোকের কাছে কুপি-হারিকেন বাতির কদর কমে গেলেও এখনো অনেকে আকড়ে ধরে আছেন কুপি-হারিকেন বাতির স্মৃতি।

 

দৌলতপুর উপজেলার পাশর্^বর্তী জালালিয়া গ্রামের আলমের বাড়িতে হঠাৎ কুপিবাতির দেখা মেলে। আলম জানান, বিদ্যুৎ চলে গেলে দাদার আমলের এই ঐতিহ্য আমি ধরে রেখেছি। তবে এর কদর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে জাদুঘরে এর স্থান দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। আধুনিক বৈদ্যুতিক যুগে বর্তমানে আবহমান গ্রামবাংলার এক সময়ের কুপিবাতি এখন শুধুই স্মৃতি। মাত্র ৮-১০ বছর আগেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে অতি প্রয়োজনীয় কুপিবাতি আজ বিলুপ্তির পথে।

 

এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আধুনিক বৈদ্যুতিক যুগে বর্তমানে কুপিবাতির স্থান দখল করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব, চার্জার লাইট, টর্চ লাইট, মোবাইল লাইটসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বাহারি যন্ত্র। ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় এই নিদর্শনটি। তবে সময়ের পরিবর্তনে এসব আর চোখে পড়ে না। ফলে এমন সময় আসবে যখন ভবিষৎ প্রজন্মদের কুপিবাতি চেনানোর জন্য জাদুঘরে নিয়ে যেতে হবে।

 

তারা আরো বলেন, গ্রামের অধিকাংশ লোকের কাছে কুপি-হারিকেন বাতির কদর হারিয়ে গেলেও এখনো অনেক লোক আছে যারা আঁকড়ে ধরে আছেন কুপির সেই স্মৃতি। গ্রামের শৌখিন গৃহস্ত বাড়ি ও অনেকে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বযত্নে কুপিবাতি সংরক্ষণ করে রেখেছেন নিদর্শন হিসেবে। 

 

ভোরের আকাশ/নি