logo
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:৪৮
হত্যা-চাঁদাবাজিসহ ২০ মামলা, ডজন ডজন জিডি
বেপরোয়া মিরপুরের সন্ত্রাসী আশিক ও তার বাহিনী
ইমরান আলী

বেপরোয়া মিরপুরের সন্ত্রাসী আশিক ও তার বাহিনী

ইমরান আলী: হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ২০টিরও বেশি মামলা, আছে কয়েক ডজন জিডি। কখনো আত্মগোপনে আবার কখনো প্রকাশ্যে। রাজধানীর অন্যতম অপরাধপ্রবণ এলাকা পল্লবীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী এই আশিক। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। ক্ষমতাসীন কিছু রাজনৈতিক নেতার নাম ব্যবহার করে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আশিক ও তার বাহিনী।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সন্ত্রাসীদের কাছে দিন দিন তারা যেন জিম্মি হয়ে যাচ্ছেন। যখন-তখন চাঁদার জন্য ফোন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে দেয়ার হুমকি, অনেকের বাড়ি ঘর দখলের জন্য হামলা, মামলায় তাদের রাজরাজত্ব। পুলিশ প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করা হলেও দৃশ্যত কোনো ফলাফল নেই। বর্তমানে এলাকার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিকও তার সহযোগীদের কাছে আমরা একরকম অসহায়।

 

স্থানীয়রা জানান, ২৬ বছর আগে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে অপকর্মের ঘটনায় আশিক ও তার ভাই গণধোলাইয়ের শিকার হন। পরে পালিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর প্রথমদিকে আশিক পল্লবীর মুসলিম বাজারে ধনিয়াপাতা বিক্রি করতেন। পরে গড়ে তোলেন ছিনতাই চক্র। ২০০০ সালে পল্লবীর বালুর মাঠ বস্তিতে শুরু হয় মাদক ব্যবসা। ওই মাদক স্পটের দখল নিয়ে আশিক বাহিনী ও মামুন বাহিনীর মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সেখানে মনির-মিলনসহ অন্তত ৫টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসব হত্যাকান্ডে আশিককে আসামি করা হয়। শুরু হয় তার সন্ত্রাসী জীবন। এরপর আর সে থেমে থাকেনি। একটি সিন্ডিকেট গড়ে একের পর এক দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীর কাতারে নিয়ে যায়। প্রকাশ্যেই অস্ত্রবাজি ও দখলবাজিতে সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়। অভিযোগ রয়েছে, মসজিদ-মাদ্রাসার নামের জমি নিজের নামে করে সেখানে একটি মার্কেটও করেছে সে।

 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অবস্থা এমন যে, কেউ প্লট বা ফ্ল্যাট কিনলে আশিক ও তার সহযোগীদের চাঁদা না দিয়ে দখলে নিতে পারে না। আবার দুর্বল প্রকৃতির লোক হলে নিজেই দখল করে নেয়। এ রকমভাবে বহু লোকের জায়গা ও ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কোনো বড় প্রতিষ্ঠান করলে সেদিকেও নজর যায় তার। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ অসংখ্য বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

 

তারা বলেন, কখনো আত্মগোপনে আবার কখনো প্রকাশ্যেই আসে সে। তার বাহিনীর লোকজন দাপিয়ে বেড়ায় পল্লবীসহ পুরো মিরপুর এলাকা। স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

 

ভুক্তভোগী মীর আলাউদ্দিন বাপ্পিসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, হত্যাসহ কমপক্ষে ২০টি মামলার আসামি আশিকুল ইসলাম আশিক ও তার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারছেন না। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সেতুমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, ঢাকা-১৬ আসনের এমপি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

 

ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয় মসজিদ-মাদরাসার প্লটসহ বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি দখল করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 

বাপ্পি বলেন, পল্লবী মুসলিম বাজার জামে মসজিদ ও মাদরাসার ১২/ত ১৮/১ নম্বর প্লট, মিরপুর ১২,ডি ১৮/১০ পঞ্চম তলার দুটি ফ্ল্যাট, নিচতলা, অফিস ও গ্যারেজ, মিরপুর ১২ নম্বরের বালুর মাঠ বর্ধিত রূপনগর ১০/১ নম্বর বাড়ির মালিক বাবুলকে কুপিয়ে দখল করে। মিরপুর ১২ নম্বরে ১০৭ ও ১০৮ নম্বর বাড়ি দুটি দখল করে। মিরপুর ১২, সি  ব্লকের, ২১ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়ির মালিক মীর আলাউদ্দিন বাপ্পির মায়ের বাড়িটি প্রহসনমূলক দখলের পর এখন ১২/সি ২১/১৩ নম্বর বাড়িটি দখলের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় মুসলিম বাজারের মসজিদ ও মাদরাসার জমি জাল-জালিয়াতি করে দখলে নিয়ে সেখানে আশিক শপিং মার্কেট বানিয়েছে।

 

স্থানীয় আকবর হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে আশিক জাহানারা নামের এক নারীর ১২/ডি, ১৮/১০ নম্বর বাড়ির নিচতলার দোকানটি ৩ মাসের কথা বলে ভাড়া নেয়। দোকানটি ছেড়ে দিতে বললে আশিক পিস্তল বের করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পুরো বাড়ি দখলের ভয় দেখায়। ওই দোকনে বখাটে ছেলেদের গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

 

স্থানীয় ইট, বালু-সিমেন্ট ব্যবসায়ী আবু জাফর শিকদারকে প্রতি গাড়িতে ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে বলে। না দেয়ায় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ১২/সি, ১৭ নম্বর রোডের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেনের স্বর্ণের দোকানটি দখল করে নেয়। সাহেদ হোসেন মনার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।

 

তিনি বলেন, দ্রুত তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

 

সূত্র আরো জানায়, একসময়ের ধনিয়াপাতা বিক্রেতা আশিক এখন বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক। তিনি চলেন ল্যান্ডক্রুজার ও প্রিমিওসহ দামি প্রাইভেট কারে। তার বাহিনীর সদস্যরা একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য। বাহিনী সদস্যদের রয়েছে ১০টিরও বেশি মোটরসাইকেল।

 

থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি ভুক্তভোগী মীর আলাউদ্দিন বাপ্পি একটি জিডি করেছেন। ২৫ ডিসেম্বর সাহেদ হাসান নামের এক ব্যক্তি জিডি করেন। গত ৭ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে জিডি হয় দুটি। আবু জাফর শিকদার ও জাহানারা নামের দুজন এ দুটি জিডিটি করেন। সবগুলো জিডিই হত্যার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে।

 

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, আশিকের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ থানায় আছে। আমরা তদন্তও করছি। দ্রæতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে আশিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি