logo
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৫:১৬
মুক্তাগাছার বাঁশের ছিপের দুর্দিন
ময়মনসিংহ ব্যুরো

মুক্তাগাছার বাঁশের ছিপের দুর্দিন

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বাঁশের ছিপ

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বংশপরম্পরায় শত বছর ধরে চলা বাঁশের ছিপের এখন দুর্দিন চলছে। এ পেশা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে তিনবেলা আহার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন কারিগররা। অনেকে বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

 

এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ছিপ তৈরি হয় মানকোন ইউনিয়নের বাদে মাঝিরা গ্রামে। নি¤œ আয়ের নারী-পুরুষ ও বেকার যুবকরা মনের মাধুরী মিশিয়ে ছিপ তৈরি করেন। এতে হাতেগোনা কয়েকজন স্বাবলম্বী হতে পারলেও হতাশার ছাপ অনেক কারিগরদের চোখে-মুখে।

 

স্থানীয় কারিগররা জানান, বর্ষাকালে নদ-নদী, খাল-বিল ও বিভিন্ন জলাশয় পানিতে ভরে যায়। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হয়। এ সময় ছিপ তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বাড়ে। লাখ লাখ ছিপ ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু সারা বছর ছিপের চাহিদা থাকে না। তবু কোনোরকমে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে ছিপ তৈরি করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সময়ে ছিপের চাহিদা কম থাকায় পাইকারদের কাছে কম দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হন কারিগররা।

 

মনোয়ার মিয়া নামের ছিপ তৈরির এক কারিগর দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এক দশক আগেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাড়া-মহল¬ায় ছিপ তৈরি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে কারিগরের সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে পাঁচটি গ্রামের শতাধিক কারিগর ছিপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এখানে উৎপাদিত ছিপ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।’

 

মোরশেদ আলী নামের এক ছিপ কারিগর বলেন, ‘এ পেশায় আমরা আর্থিকভাবে তেমন উন্নতি করতে না পারলেও পাইকারদের ভাগ্য বদলেছে। তারা আমাদের সারা বছর ছিপ তৈরি করতে বলেন। আমরাও ছিপ তৈরি করে তাদের জানাই। এরপর পাইকাররা জানান, বর্ষাকাল ছাড়া ছিপ বিক্রি হবে না। এত মাস গুদামঘরে ছিপ রেখে দিতে হবে। এমন অজুহাতে কম দাম দিয়ে ট্রাক ভর্তি করে ছিপ নিয়ে যান তারা।’

 

মোরশেদ আলী বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন কারিগরের ছিপের বাঁশঝাড় থাকলেও বেশির ভাগ কারিগর সুনামগঞ্জ থেকে বাঁশ কিনে আনেন। এরপর এগুলো সুন্দরভাবে ছাঁটাই করেন নারীরা। পরে পুরুষ শ্রমিকরা বিশেষ কায়দায় চুলার আগুনে বাঁশগুলোতে তাপ প্রয়োগ করেন। প্রথমে আঁকাবাঁকা বাঁশ থাকলেও আগুনের তাপ আর কারিগরের হাতের ঘর্ষণে বাঁকা ছিপ তৈরি হয়।’

 

ব্যাংক থেকে অল্প সুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়ে বয়োবৃদ্ধ হাসিম উদ্দিন বলেন, ‘ছিপ তৈরির অধিকাংশ কারিগর গরিব। তারা অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি ছিপ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে, যারা শুধু ছিপ তৈরির ওপর নির্ভরশীল। জমানো টাকা না থাকার কারণে ছিপের বাঁশ কিনতে পারেন না তারা। তাদের ব্যাংক থেকে অল্প সুদে ঋণ দরকার।’

 

মুক্তাগাছা থেকে নিয়মিত ছিপ কেনেন সুনামগঞ্জের পাইকার আসাদুল হক। ছিপের চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ছিপের বাজার বর্তমানে খুবই খারাপ। এ ব্যবসা পারছি না ছাড়তে, পারছি না ধরে রাখতে। কারিগরদের কাছ থেকে খুব কম দামে কিনে নিতে আমরাও বাধ্য হচ্ছি, কারণ এসব ছিপ তাৎক্ষণিক বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন খুচরা দোকানে বাকিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে স্বাচ্ছন্দ্যে এ ব্যবসা করা যাচ্ছে না। বর্ষাকালে ব্যবসা চাঙা হবে এমন আশায় দিন গুনতে হয়।’

 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও গৌরীপুর উপজেলায় ছিপ তৈরি হয়। নানা কারণে আগের চেয়ে কারিগরের সংখ্যা কমেছে। বর্ষাকালে মাছ ধরার জন্য ছিপের চাহিদা অনেক। সেই চাহিদা পূরণ করতে কম দামে আগেই কিনে নেন পাইকাররা। ন্যায্য দাম পেতে সব কারিগরের উচিত একত্র হয়ে পাইকারদের সঙ্গে আলোচনা করা। তাহলে বেচাকেনায় ঠকবে না কেউ।’

 

ভোরের আকাশ/নি