আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল: কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সত্যি তাই, ইচ্ছে ছিল সাইকেল চালিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা। যেমন ইচ্ছে, ঠিক তেমন কাজও তার। সাইকেল চালিয়ে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ২০১ গম্বুজ মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার জন্য এসেছেন ৫৮ বছর বয়সি বৃদ্ধ রাসেল লাল বিশ্বাস। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সহযোগিতা করেছেন পরিবার ও স্বজনরা।
জুমার নামাজ আদায় করার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত ২০১ গম্বুজ মসজিদে পৌঁছান। পরে দুপুরে স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। সে সময় তাকে দেখতে মুসল্লি ও স্থানীয় লোকজন ভিড় জমান। তার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন মুসল্লিরা। সে সময় থেকে তার সঙ্গে ছবি ও সেলফিও ওঠে উৎসুক জনতা।
গত শুক্রবার ২০১ গম্বুজ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি। এ সময় শত শত মুসল্লির কাছে প্রশংসায় ভাসেন। বৃদ্ধ রাসেল লাল বিশ্বাস এর বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা পৌর এলাকার পশ্চিম গারাখোলা গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুল ছাত্তার বিশ্বাস এর ছেলে। পেশায় তিনি বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি বলে জানান তিনি। নামাজ পড়ার উদ্দেশে বুধবার সকাল ৬টায় যাত্রা শুরু করেন।
বৃদ্ধ রাসেল লাল বিশ্বাস জানান, পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া এলাকায় নির্মিত ২০১ গম্বুজের বিষয়ে জানতে পারেন। তিনি এসব মাধ্যমে জেনেছেন দৃষ্টিনন্দন এই ২০১ গম্বুজ মসজিদে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ জুমা’র নামাজ পড়তে আসেন। সে থেকেই ইচ্ছে জাগে ২০১ গম্বুজ মসজিদে নামাজ পড়ার।
তিনি জানান, পরে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ওই মসজিদে আসার। বাসে আসলে আশপাশে পরিবেশ দেখা যাবে না ভেবে পুরোনো একটি বাইসাইকেল নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানরা সাইকেল নিয়ে আসতে উৎসাহিত করেন। সেই উৎসাহ থেকে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে মসজিদে আসতে সক্ষম মানিকগঞ্জের শিবালয়, ঘিওর হয়ে দৌলতপুর উপজেলা সদরে আসেন বুধবার দুপুরে।
সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করেন রাসেল। এরপর টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা পার হয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অলোয়া এলাকায় একটি মসজিদে রাতযাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওই এলাকার মতিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তি তাকে তার বাড়িতে রাতযাপন করার সুযোগ দেন। পরে আবারো প্রস্তুতি নেন গোপালপুরে যাওয়ার। এরপর সেখান থেকে ভূঞাপুর হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টায় আবার যাত্রা শুরু করেন গোপালপুরের উদ্দেশে।
দুপুর ১২টায় তিনি গোপালপুরের পাথালিয়া গ্রামে ২০১ গম্বুজ মসজিদে পৌঁছান। স্থানীয় নূর আলমসহ বেশ কয়েকজন জানান, রাসেল বিশ্বাস নামের এই বৃদ্ধ লোকটি তার নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাইকেলযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছান। পরে তাকে দেখতে লোকজন ভিড় করে। তার সঙ্গে অনেকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিদের সঙ্গে। বিষয়টি খুবই প্রশংসনীয়।
২০১ গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল করিম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে মসজিদে এসে দেখি এক ব্যক্তি সাইকেলযোগে ২০১ গম্বুজ মসজিদে এসেছেন। পরে তার সঙ্গে কথা বললে, তিনি এই মসজিদে নামাজ পড়া ইচ্ছের বিষয়টি জানান।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে তিনি ধনবাড়ীর নবাববাড়ী মসজিদ দেখার উদ্দেশে রওনা হন। এখানে আসতে পেরে তিনি অনেক খুশি এবং তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ভোরের আকাশ/নি