শিক্ষা গ্রহণের কোনো বয়সসীমা নেই। সেটা আবারো প্রমাণ করলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান মিয়া। সঠিকভাবে দোকানের হিসাব রাখতে সময় ও নিয়ম মেনে প্রতিদিন স্কুলে আসছেন তিনি। নাতির বয়সি শিশুদের সঙ্গে গ্রহণ করছেন শিক্ষা। ইতিমধ্যে বেশ অগ্রসর হয়েছেন শ্রমজীবী এই মানুষটি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাতে প্রথম শ্রেণির বই নিয়ে ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মান্নান মিয়া নাতির ছেলে কাওসারের সঙ্গে স্কুলে আসছেন। এ বছরে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি। অন্য শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে ক্লাস করছেন। নানার বয়সে বন্ধু পেয়ে খুশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। আব্দুল মান্নানের বাড়ি ওই ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত তছিম উদ্দিন।
ক্লাসে গিয়ে কথা হয় আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি জীবনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, আমরা ৬ ভাই, এক বোন। আমি তৃতীয়। ছোটবেলায় লেখাপড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু অভাবের কারণে করতে পারিনি। স্কুলে তখন তো সরকারি কোনো বই দিত না, খেয়ে না খেয়ে বড় হয়ছি। তারপর অন্যের জমিতে শ্রম দিতে শুরু করি। কখনো শ্রম বিক্রি আবার কখনো রিকশা-ভ্যান চালাইতাম। বয়স বাড়ল, শরীরের শক্তি কমে আসল, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবিকার তাগিদে কাশিয়াবাড়ি বাজারে একটি দোকান দিয়েছি। সেখানেই পানের খিলি বিক্রি করি, পাশাপাশি স্কুলের বই পড়ি।
স্কুলে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে, আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, দোকান দেয়ার পর থেকে অনেক বাকি বিক্রি করতে হয়েছে। বয়স হয়েছে, দোকানের হিসাব মুখে মুখে রাখা সম্ভাব হয় না, তাই লেখাপড়া করার জন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছি।
দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মমিরুল ইসলাম পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়ের ছেলে মাহফুজার রহমানের বিয়ে হয়েছে। তার ছেলের নাম কাওসার। তার সঙ্গেই স্কুলে যান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া বলেন, বয়স কোনো ব্যাপার না। ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভাব হয়। তার প্রমাণ মান্নান চাচা। তিনি বৃদ্ধ বয়সে স্কুলে শিখতে আসছেন। প্রতিদিন তিনি স্কুলে যান। স্কুল ছুটি হলে দোকানে বসেন।
কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মন্ডল বলেন, স্কুলে ভর্তির একটি নিদির্ষ্ট সময়সীমা আছে। আব্দুল মান্নান স্কুলে ভর্তির জন্য বললে আমি স্যারদের সঙ্গে কথা বলে তাকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি দেখিয়ে বই দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি অনেক কিছুই শিখেছেন। স্কুলের নিয়মনীতি মেনেই তিনি স্কুলে আসছেন।
পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মোখছেদ চৌধুরী বলেন, এই বয়সে লেখাপড়া করার খবর শুনে আমিসহ এলাকার সবাই ভীষণ খুশি। তিনি এ বয়সে লেখাপড়া করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সমাজের কাছে সমাদৃত হয়ে থাকবে। তার এই উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পাবে। ওই প্রধান শিক্ষককে তার বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি