চলতি বোরো মৌসুমের ধান লাগিয়ে পানি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক লিটন আলী। বিগত বছরগুলোতে পানি পেলেও এবার মৌসুমে তিনি পানি পাচ্ছেন না। নিজের জমির চারপাশে ধানি জমিতে পানি থৈ থৈ করলেও তার জমিতে পানির অভাবে মাটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি না পাওয়ায় একটি অভিযোগ করেছেন বিএডিসির স্থানীয় সেচ ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে।
মাগুরা জেলার শালিখার আড়পাড়া ইউনিয়নের আনন্দ নগরের কৃষক লিটন আলী। চলতি বোরো মৌসুমে নিজের জমিতে কম টাকায় পানি না পেয়ে তার মনে নেই কোনো আনন্দ। প্রতিদিন নিজের লাগানো ধান দেখতে যান আনন্দ গ্রামের উত্তর মাঠে। বিএডিসির অত্র এলাকায় দুটি শক্তিশালী মটরের সাহায্যে খাল থেকে পানি দেয়ার ব্যবস্থা আছে।
একটি মোটর থেকে অত্র এলাকার আনন্দ নগর, পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও কুমুরকোটার চারটি গ্রামের ৩১ একর ২১ শতক জমিতে পানি দেয়া হয়। ১৫ টাকা শতক প্রতি পানি নেয়ার সুবিধা পেতে কৃষক লিটন মোল্লাও চেষ্টা করেছেন পানি পাবার। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি দুই মাস কেটে গেছে পানি নিতে পারছেন না অত্র এলাকার বিএডিসির ব্যবস্থাপক থেকে। পানি না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে ওই ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন।
কৃষক লিটন আলী জানান, তার ৪৭ শতক জমি থেকে মাত্র ১৬ ফুট দূরত্বে বিএডিসির সেচ দেয়ার মুখ আছে। সেখান থেকে পানি যাচ্ছে আশপাশের কৃষকদের জমিতে। একই আইলে নিজের জমিতে পানি নেই। অথচ পাশেরটায় ঠিকই পানি থৈ থৈ করছে। আমি এ নিয়ে এখানকার সেচ ম্যানেজার রুস্তম মোল্লাকে বললে তিনি বলেন, তোকে পানি দেয়া হবে না।
আমি বিএডিসি থেকে এর সঙ্গে যারা জড়িত সবার কাছে ঘুরেছি। পানি দেবে দেবে করে দেয়নি কেউ। এরপর টের পেলাম প্রশাসন চাইলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারে আমি পানি পাচ্ছি না। তাই ওই সেচ ব্যবস্থাকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করে দিয়েছি এক মাস হলো। এরপর সে আমাকে শারীরিকভাবে হামলা করলে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা আছে।
সরেজমিন সোমবার কৃষক লিটন আলীর পানি না পাওয়া জমিতে গিয়ে দেখা যায়, বিএডিসির সেচ প্রকল্পের অধীনে লিটন আলীর জমি থেকে ১৬ ফুট দূরত্বে রয়েছে সেচের মুখ। সেখান থেকে পানি যাচ্ছে অন্য কৃষকদের জমিতে। কিন্তু ভুক্তভোগী এ কৃষকের জমিতে পানির পথ মাটি দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএডিসির ওই অঞ্চলের ব্যবস্থাপক রোস্তম মোল্লা জানান, বিএডিসির সেচ নেয়ার জন্য লিটন আলী উপযুক্ত হয়নি। সে আমার আওতাধীন নয়। তাই সে পানি পাচ্ছে না।
পানি পেতে বিএডিসির নিয়ম কি জানতে চাইলে শালিখা উপজেলার বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেচ যন্ত্র থেকে ১৪ একর জমিতে পানি দেয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু শালিখার বেশিরভাগ এলাকায় ধারণক্ষমতার বেশি এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। ভুক্তভোগী কৃষকের জমির পাশে যদি বিএডিসির পানির পাইপ থাকে তবে তো পাওয়া কথা। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
একজন কৃষক কেন পানি পাবে না এ বিষয়ে শালিখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিএডিসির সেচ কমিটির সভাপতি ইয়াসমিন মনিরা বলেন, ওই কৃষক আমার কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছিল যে সে পানি পাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি দেখছি। তাকে পানি দেয়ার বিএডিসির যে নিয়ম আছে তা খতিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আশা করি তিনি খুব শিগগিরই পানি পাবেন।
ভোরের আকাশ/নি