logo
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৬:৪৯
পাহাড়ে বাড়ছে এলাচ চাষ: বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন বুনছেন চাষি
বান্দরবান প্রতিনিধি

পাহাড়ে বাড়ছে এলাচ চাষ: বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন বুনছেন চাষি

বান্দরবানের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে সুগন্ধি মসলাজাতীয় ফসল এলাচ

পাহাড়ে এলাচ চাষ নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেকেই এদিকে ঝুঁকে পড়ছেন। সরকারিভাবে কৃষি বিভাগ আমদানিনির্ভরতা কমাতে বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে চাষিদের। বান্দরবানের পাহাড়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুগন্ধি মসলাজাতীয় ফসল এলাচ।

 

এলাচ চাষ করে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কয়েক জন চাষি। পাহাড়ে উৎপাদিত এলাচ দিয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন বুনছেন তারা।

 

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে বান্দরবান সদরের চিম্বুক পাহাড়ের ওয়াইজংশন এলাকার পাহাড়ে পরীক্ষামূলক ১২০টি সবুজ রঙের এলাচ চারা লাগান স্কুলশিক্ষক মেনয়াং ম্রো ও তার স্ত্রী। পরিমাণে কম হলেও চারা লাগানোর দুই বছর পরই বাগানে এলাচ উৎপাদন হয়। সাফল্যের হাতছানিতে পরবর্তী সময়ে প্রায় দেড় একর পাহাড়ি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষ করেন মেনয়াং ম্রো। তার দেখাদেখি চিম্বুকের বসন্তপাড়া, রুমার মুন্নাম পাড়াসহ জেলার অনেক চাষি সবুজ ও কালো রঙের এলাচ চাষ করেছেন পাহাড়ে।

 

গত বছরের তুলনায় এ বছর এলাচের উৎপাদন কয়েক গুণ বেশি হবে বলে ধারণা করছেন চাষিরা। বর্তমানে দেশের খুচরা বাজারে আকার অনুপাতে প্রতি কেজি এলাচ ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এখানকার চাষিরা তাদের এলাচ ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন। এলাচ চাষ সম্প্রসারণের জন্য অনেক চাষি স্থানীয়ভাবে এলাচের চারা উৎপাদন করে আগ্রহী চাষিদের মধ্যে বিক্রি করছেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জাতের এলাচ চাষ করা গেলে আগামীতে বিদেশ থেকে সুগন্ধি মসলা এলাচ আর আমদানি করতে হবে না। বরং পাহাড়ে উৎপাদিত এলাচ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।

 

চাষি মেনয়াং ম্রো বলেন, শখের বসে খুলনার বেনাপোল থেকে এলাচ চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে এলাচ চাষ করেছিলাম। সফলতা পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে এলাচ চাষ শুরু করেছি। গত বছর ১০ কেজির অধিক এলাচ ফল পেয়েছি। আমার বাগানে প্রায় তিন শতাধিক এলাচ গাছ রয়েছে। নতুন করে আরো এলাচ চারা সংগ্রহ করা হয়েছে।

 

এনিমং মারমা নামের আরেক চাষি বলেন, এলাচ চারা লাগানোর দুই বছর পর থেকে ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছের গোড়ায় গুচ্ছ আকারে ফুল হয় লতার মতো। সেই ফুলগুলো থেকেই এলাচ ফল হয় গুচ্ছ আকারে। প্রতিটি গাছের গোড়াতে গুচ্ছে গুচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার গ্রাম পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এলাচ ফল পরিপক্ব হলে বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকানো হয়।

 

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এমএম শাহনেওয়াজ বলেন, পাহাড়ে আবহাওয়া ও মাটি মসলা চাষের বেশ উপযোগী। একটি এলাচ গাছ কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। এলাচ চাষের সুবিধা হচ্ছে, এর জন্য আলাদা কোনো জমির দরকার হয় না।

 

যেকোনো ফলের বাগানে গাছের ছায়ায় এলাচ চাষ সম্ভব। পাহাড়ে এলাচ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে। অল্প খরচে আয়ও বেশি। আমদানি কমাতে স্থানীয়ভাবে দেশে মসলা চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। মসলা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চাষিদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি