logo
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৪:৫৭
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস-পেট্রোল
শেরপুর প্রতিনিধি

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস-পেট্রোল

শেরপুরে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার, পেট্রোল, অকটেনসহ নানা দাহ্য পদার্থ দাহ্য পদার্থ বিক্রির নীতিমালা লঙ্ঘন

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শেরপুরে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার, পেট্রোল, অকটেনসহ নানা দাহ্য পদার্থ। অনুমোদিত পেট্রোলপাম্প ছাড়া পেট্রোলজাতীয় দাহ্য পদার্থ বিক্রির বিধান না থাকলেও দেদারসে বিক্রি করছে দোকানিরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এমনভাবে বিক্রি চললেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছেন তারা।

 

নিয়ম অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুদ স্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রয়োজন হয়। বিক্রির জায়গাটি কমপক্ষে ফ্লোর পাকাসহ আধা পাকা ঘর থাকতে হবে। প্রয়োজন হয় পরিষ্কার-পরিছন্নতারও। এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনপত্র, জ্বালানি অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান রয়েছে।

 

তাছাড়া ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগারও থাকতে হবে। কিন্তু কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই ছোট-বড় বেশিরভাগ দোকানে এখন বিক্রি হচ্ছে এসব। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

 

সম্প্রতি শেরপুরের বিভিন্ন হাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সার, কীটনাশক, মুদি দোকান, রড-সিমেন্ট, পান, চা, বিকাশ-ফ্লেক্সিলোডের দোকানে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার। এমনকি কাঁচামালের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। একি দোকানে পেট্রোল-অকটেন, ডিজেল জাতীয় দাহ্য পদার্থের সাথে অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।

 

সড়কের পাশে, ফুটপাতে কড়া রোদে ফেলেও রাখা হয়েছে এসব সিলিন্ডার। বেশিরভাগ দোকানে নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও। অত্যন্ত সংবেদনশীল ও দাহ্য পদার্থ হওয়া সত্তে¡ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নেই কোনো তদারকি।

 

সকল নিয়ম মেনে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করবেন দোকানীরা, এতে নিরাপদে থাকবেন ব্যবসায়ী, পথচারীসহ আশপাশের লোকজন; এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। তবে ব্যবসায়ীরা জানান ভিন্ন কথা, লাইসেন্স সম্পর্কে কেউ অবগত না থাকায় তারা করেননি লাইসেন্স। ফলে যে যার মতো করে ঝুঁকি নিয়ে একই সাথে বিক্রি করছেন বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ।

 

সদর উপজেলার গাজীরখামার বাজারের আশরাফুল এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ আমি সার, কীটনাশকের ব্যাবসার পাশাপাশি সিলিন্ডার ও পেট্রোল বিক্রি করি। আমার দোকানের ট্রেড লাইসেন্স আছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনপত্র বা পরিবেশের কাগজপত্র লাগে, আমি জানতাম না। আমি দ্রুত এসব কাগজপত্রের জন্য আবেদন করবো।’

 

বাজিতখিলা বাজারের ‘বাচ্চু ডিজেল ও মবিল ঘর’র কর্মচারীরা বলেন, ‘আমরা পাম্প থেকে পেট্রোল কিনে নিয়ে আসি, তারপর বোতলে করে সাজিয়ে রেখে বিক্রি করি। সড়কের পাশে রেখে বিক্রির বিষয়ে তারা বলেন, বাজারে আরও অনেক দোকানে পেট্রোল বিক্রি করে, যদি মানুষের চোখে বোতল না দেখা যায় তাহলে ত বিক্রি হবেনা।

 

তাই সড়কের পাশে রাখা হয়েছে। আর লাইসেন্সের ব্যাপারে জানান, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনপত্র, জ্বালানি অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যাপাওে তারা জানেননা কিছু।’

 

পৌর শহরেরর আখের মামুদ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস আর ডি আলম বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই দোকানিকে ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অদিদপ্তর ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হবে। নীতিমালা মেনে ব্যবসা করতে হবে। সড়কের ধারে সাজিয়ে রেখে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোলের বোতল বিক্রি করা বিপজ্জনক। এ ছাড়া যত্রতত্র দাহ্য পদার্থ বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।’

 

সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি'র জেলা সহ সভাপতি বাবু চক্রবর্তী বলেন, ‘এসব সিলিন্ডার ও বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ একই দোকানে বিক্রি করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বেশিরভাগ দোকানেই নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও। যাওবা আছে, জানেন না ব্যবহার বিধি। একেকটা সিলিন্ডার একেকটা বোমের মতো। তাই দোকানি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সম্মিলিতভাবে ঝুঁকি এড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।’

 

সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা বলেন, ‘দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে। এভাবে যত্রতত্র সিলিন্ডার ও পেট্রোলজাতীয় দাহ্য পদার্থ বিক্রি করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ হতে দোকানিদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে, যেন চকবাজারের মতো ঘটনার কোথাও পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

 

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের শেরপুরের উপ-সহকারি পরিচালক জাবেদ হোসেন মুহাম্মদ তারেক জানান, ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা না থাকায় ঠিক মতো তদারকি করতে পারছেন না জেলা ফায়ার সার্ভিস। যত্রতত্র সিলিন্ডার ও পেট্রোলজাতীয় দাহ্য পদার্থ বিক্রির বিরুদ্ধে দ্রুতই জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া বিভিন্ন হাট বাজারে গিয়ে জনসচেতনতায় অগ্নিনিবারণ পদ্ধতি প্রদর্শণ করছেন তারা।

 

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, ‘বিভিন্ন দোকানে অনুমোদন ছাড়াই গ্যাসের সিলিন্ডার, পেট্রোল, অকটেনসহ নানান দাহ্য পদার্থ বিক্রি হচ্ছে, তা আমরা সম্প্রতি জানতে পেরেছি। দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। যত্রতত্র এসব বিক্রির বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি