logo
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:০৫
আবারো শুরু হচ্ছে ‘লোহালিয়া সেতু’র কাজ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি

আবারো শুরু হচ্ছে ‘লোহালিয়া সেতু’র কাজ

পটুয়াখালী জেলা সদরের লোহালিয়া সেতু

এক যুগ পর লোহালিয়া নদীর ওপর প্রস্তুত হচ্ছে ‘লোহালিয়া সেতু’। প্রথম প্রাক্কলন ও ডিজাইন পরিবর্তন করে নির্মাণকাজ শুরু করেছে ‘এলজিইডি’। নদীর মূল চ্যানেলে তিনটি আরসিসি স্প্যানের পরিবর্তে এবার ১০৭.২৫ মিটারের একটি ইস্পাতের স্প্যান বসানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ১শ কোটি টাকা।

 

তবে অ্যাপ্রোচ রোড থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয়ে রয়েছে আলাদা প্রকল্প। ওই সময়ে ‘পায়রা সমুদ্র বন্দর’ প্রকল্প চলাকালে সেতু নির্মাণে আপত্তি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। যে কারণে দীর্ঘদিন কাজ স্থগিত ছিল। সব জটিলতা কাটিয়ে এবার আবারো কাজ শুরু হচ্ছে। তবে সফলতায় কিছু অনিশ্চয়তাও রয়েছে।

 

একদিকে প্রস্তুত হচ্ছে শত কোটি টাকার সেতু, অন্যদিকে পলি জমে নদী নাব্য হারাচ্ছে। এ কারণে পণ্যবাহী যান চলাচলে সংকট তৈরি হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে খনন না হলে পায়রা বন্দর থেকে পণ্যবাহী লাইটারেজ জাহাজ লোহালিয়া নদীতে প্রবেশের পরিকল্পনা স্বপ্নই থেকে যাবে। এ জটিলতা নিরসনে নদী খনন প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই এ উদ্যোগ নিতে হবে।

 

পটুয়াখালী এলজিইডি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পটুয়াখালী জেলা সদরের সঙ্গে বাউফল-দশমিনা ও গলাচিপা এবং ভোলার সঙ্গে সড়কপথের ভোগান্তি কমাতে ২০০৮ সালে লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় ‘এলজিআরডি’ মন্ত্রণালয়। ২০১১ সালের নভেম্বরে কাজ শুরু হয়। ওই সময়ে সেতুর ৫৫ শতাংশ কাজ এগিয়ে গেলে পায়রা সমুদ্রবন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেতু তৈরিতে আপত্তি ওঠে।

 

২০১৪ সালের অক্টোবরে স্থানীয় সরকার ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্তে সেতু নির্মাণ স্থগিত হয়। এরপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পে নেমে আসে অনিশ্চয়তা। প্রথম ধাপে নদীর মূল চ্যানেলে ১২.৫ মিটার ভার্টিক্যাল রেখে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৪টি আরসিসি স্প্যান ও ১১টি পিয়ারে সেতুর দৈর্ঘ্য দেয়া হয় ৪৬৪.৭৫ মিটার। এসব জটিলতা কাটাতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

২০১৬ সালের ১৭ জুলাই বিআইডবিøউটির অনুমোদিত নদীর মূল চ্যানেলে ১২.৫ মিটার ভার্টিক্যাল পরিবর্তন করে ১৩.৫ মিটারে উন্নীত করে নতুন ডিজাইনে কাজ শুরু হয়। কিন্তু নদীর মূল চ্যানেলে ইস্পাতের স্প্যান স্থাপনের ফলে ১৩.৫ মিটারের পরিবর্তে ১৫ মিটার ভার্টিক্যালে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও একই স্থানে ৩৫ মিটার হরাইজন্টালকে ৭০ মিটারে উন্নীত করা হয়েছে।

 

কিন্তু ইস্পাতের স্প্যান স্থাপনের ফলে ৭০ মিটারের হরাইজন্টাল ১০৭.২৫ মিটারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও সেতুর ৪৬৪.৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যকে পরিবর্তন করে ৫৭৬.২৫ মিটার করা হয়েছে। নদীর মূল চ্যানেলে ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ১০৭.২৫ মিটার ইস্পাতের স্প্যানটি তৈরি করছে চীনের রেডিয়ান মেরিন ডিজাইন অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড এবং আরসিসি কাঠামো নির্মাণে রয়েছে নবারুন ট্রেডার্স এবং মেসার্স আবুল কালাম আজাদ (জেভি)। এসব কারণে নদীর মূল চ্যানেলে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকছে না।

 

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন বলেন, চলতি বছরের জুনে সেতুতে যান চলাচল করবে, এমন প্রত্যাশায় আমরা দ্রæত কাজ করছি। নির্ধারিত সময়ে সেতু উন্মুক্ত হবে।

 

এদিকে নদীর মূল চ্যানেলে পলি পড়ে নাব্য কমে যাচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, এক দশক আগের খরস্রোতা লোহালিয়া নদীর মূল চ্যানেলের প্রস্থ দিন দিন কমছে। ৫৭৬.২৫ দৈর্ঘ্যরে সেতুর মাঝ পয়েন্টে বসানো ১০৭ মিটার ইস্পাতের স্প্যানে পানি চলাচল করছে। নদীর দুই পাড় থেকে পলি জমে ১০৭ মিটার স্প্যান পিয়ারে ঠেকেছে। পরবর্তীতে ওই পিয়ারের কারণে আরো পলি জমার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত বঙ্গোপসাগরের উপ-শাখা এই নদীটি। দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাসহ অন্য জেলায় পৌঁছাতে এই নৌরুট ব্যবহার করে আসছে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান। অথচ এই নদীর ৮০ শতাংশ মরে গেছে। ইতোমধ্যে জেগে ওঠা চর দখলে নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছে প্রভাবশালীরা। এ ছাড়া নির্মিত সেতুর পশ্চিম পাশে জৈনাকাঠি নদীর বাঁকে পলি জমে প্রস্থ দাঁড়িয়েছে ৫০ মিটারে।

 

শীত মৌসুমে সাধারণ নৌযানের পাশাপাশি রাঙ্গাবালী-গলাচিপা-ঢাকা নৌরুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়াও ঢাকা-পটুয়াখালী-গলাচিপা-রাঙ্গাবালী নৌরুটের লঞ্চ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি