logo
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৯:৫৪
জেলা হাসপাতাল ৫০০ এবং উপজেলা হাসপাতালগুলো ১০০ বেডের করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী 
নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা হাসপাতাল ৫০০ এবং উপজেলা হাসপাতালগুলো ১০০ বেডের করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী 

দেশের সব জেলা হাসপাতাল ৫০০ বেডের এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোকে ১০০ বেডের করা হবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।


আজ বিকেলে দিনাজপুরে এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কদের সাথে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি বিষয়ক বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

 

মন্ত্রী বলেন, দেশের ৪৯৬ টি উপজেলায় ৪৯৬ টি সরকারি উপজেলা হাসপাতাল আছে, ৬৪ টি জেলায় বড় বড় হাসপাতাল আছে, ইউনিয়ন পর্যায়েও হাসপাতাল আছে, তবুও মানুষকে ছোট ছোট প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের টেস্টের জন্য মেশিন দেয়া হয়েছে, অথচ বেশির ভাগ মেশিন নষ্ট হয়ে বছরের পর বছর পড়ে আছে। সরকারি টাকায় কেনা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, আর বাইরের ছোট ছোট ক্লিনিকে ঠিকই সব টেস্ট হচ্ছে। কই বাইরের প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালের যন্ত্রপাতি তো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকেনা! তাহলে সরকারি হাসপাতালের মেশিন কেন নষ্ট থাকবে? এগুলো আর চলবে না।

 

তিনি বলেন, এসব কারনে মানুষের কষ্টের আয়ের অনেক টাকা অপচয় হচ্ছে। অথচ সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে হাজারটা হাসপাতাল নির্মান করছে, অবকাঠামো বৃদ্ধি করছে, হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স নিয়োগ দিচ্ছে। এই অনিয়ম বন্ধ করতেই আমরা মাঠে নেমেছি। গতদিন রংপুর হাসপাতালে দেখেছি, সাড়ে পাঁচ'শ যন্ত্রপাতির সাড়ে চার'শ-ই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অধিকাংশ হাসপাতালেরই প্রায় একই চিত্র। তাহলে ঐসব হাসপাতালে মানুষ কী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে? এভাবে আর চলতে পারবে না। কোথাও অনিয়ম ধরা পরলে ঐ প্রতিষ্ঠান যারা চালায় তারা তার জন্য সমস্যায় পড়বে। কি সমস্যায় পড়বে সেটা তারা পরে বুঝতে পারবে। আমরা মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে, মানুষকে সুস্থ করতে আপনাদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছি। আগামীতে সারা দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে ৫০০ বেডের এবং উপজেলা হাসপাতালকে ১০০ বেডে উত্তীর্ণ করা হবে। কিন্তু মানুষকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেবার কাজটা আপনাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্ব পালনে দেশপ্রেম থাকতে হবে আপনাদের। করোনায় কত ভালো কাজ করেছেন আপনারা, এখনো চেষ্টা করলেই পারবেন। প্রাইভেট ক্লিনিক, ছোট ছোট প্রাইভেট হাসপাতালে মানুষের কাছ থেকে বেশি টাকা নেবার বিনিময়ে যদি সেবা দিতে পারে, নিয়মিত টেস্ট করতে পারে, আপনারা কয়েকগুণ বেশি সুবিধাসম্পন্ন ও বড় হাসপাতালের সুবিধা নিয়েও সাধারণ মানুষকে সরকারি টাকার ভালো সেবা দিবেন না তা আর হবেনা। এখন থেকে যাকে যেখানে অনিয়ম করতে দেখা হবে তার বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

 

বিকেলে দিনাজপুরের এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অডিটোরিয়াম হলে রংপুর বিভাগের বিভাগীয় সভায় রংপুর বিভাগীয় সকল জেলা, উপজেলা থেকে আগত উপস্থিত সিভিল সার্জন, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

 

সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন, কার হাসপাতালে কয়টি যন্ত্রপাতি আছে,কয়টি ভালো, কয়টি নষ্ট, লোকবল কত আছে, কতজন মানুষকে দৈনিক সেবা দিচ্ছে, আশেপাশে কয়টি করে প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতাল আছে এগুলো জিজ্ঞেস করেন।

 

উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কাজ করার পাশাপাশি তাদের প্রমোশন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে দাবী জানালে সেই দাবী প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমার সময়ে আপনারা যত প্রমোশন পেয়েছেন, গত ১৫ বছরে সেই প্রমোশন হয়নি। আগামী কয়েক মাসে যত প্রমোশন দেয়া হবে তা গত কয়েক বছরের সমান হবে। কিন্তু মাঠে আমরা কাজ দেখতে চাই। আমরা চাই আপনারা জনগণের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি করবেন, হাসপাতাল ঝকঝকে পরিষ্কার রাখবেন, রোগীদের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন, রোগীরা যেনো হাসিমুখে হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় সেটা আপনিই নিশ্চিত করবেন।

 

সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৫-২০ জন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরাসরি মাঠে নেমে পড়েছেন। গত তিন দিনে বগুড়া, রংপুর ও আজ দিনাজপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিজে গিয়ে রোগীদের সাথে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলছেন। এগুলো লোক দেখানোর কাজ নয়। এগুলো পরিবর্তনের অঙ্গীকার থেকে করা কাজ। আপনারা যদি এখন জেগে না ওঠেন তাহলে আর কবে উঠবেন। একটু একটু সজাগ হলেই আপনারা দেশ সেবায় বিরাট ভুমিকা রাখতে পারবেন। এই মহৎ কাজ থেকে আর কেউ বিরত থাকবেন না। আজ থেকেই মানুষের সেবায় চিকিৎসার মান বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা করুন, কাজ শুরু করুন।

 

এর আগে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিনাজপুরের মা ও শিশু হাসপাতাল, এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন ও সেখানে কর্মরত স্বাস্থ্যখাতের কর্মকর্তা এবং চিকিৎসারত নানা ওয়ার্ডের রোগীদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন।

 

সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামিউল ইসলাম সাদি, স্বাস্থ্য অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বশির আহমেদ, রংপুর বিভাগীয় হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক হানিফ, দিনাজপুর এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, হাসপাতালের অধ্যক্ষ, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা - উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চিকিৎসক গণ বক্তব্য রাখেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা