তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মাঝে তুরস্কে ৩৯ হাজার ৬৭২ এবং সিরিয়ায় ৫ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ভূমিকম্পের ১২তম দিনে এসে এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ধ্বংসস্তূপ থেকে। উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির বয়স ৪৫ বছর। খবর আলজাজিরার। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকে চলছে উদ্ধার অভিযান। প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। একইসঙ্গে চলছে উদ্ধার অভিযান এবং ত্রাণ সহায়তা। এর অংশ হিসেবে জাতিসংঘের ত্রাণ নিয়ে ১৭৮টি ট্রাক তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় গিয়েছে। এগুলোয় জাতিসংঘের ৬টি সংস্থার বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী রয়েছে। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ এ ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত মুছতে আরো বহুদিন লেগে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘শতাব্দীর ভয়াবহতম’ এ ভূমিকম্পে মোট ৫০ হাজার ৫৭৬টি ভবন পুরোপুরি ধসে পড়েছে অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউনিয়ান অব চেম্বার্স অব তুর্কি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টসের (টিএমওবিবি) সভাপতি ইয়ুপ মুহকু বলেছেন, বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে ‘উল্লেখযোগ্য সময়’ লেগে যাবে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরের দিকে ৭.৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানে। পরে দুপুরের দিকে আরো একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প তুরস্কে আঘাত হানে। দেশ দুটিতে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। বহু লোকজন ঘরছাড়া হয়ে সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তুরস্ক অনেক দেশের কাছ থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছে। তবে সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ত্রাণ সাহায্য নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ১২ দিনেরও বেশি সময় কেটে গেছে। উদ্ধার অভিযান আগের চেয়ে কমে এসেছে। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এ ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি ভবন ভেঙে পড়েছে অথবা তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের পর অনেক দেশ তুরস্কের জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটিতে সহায়তা আসছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া হলো বড় উদ্বেগের জায়গা। সেখানে ত্রাণ বিতরণে ধীরগতির কারণে অসন্তোষ বাড়ছে। জাতিসংঘ ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ সিরিয়ানের আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্যের জন্য ৩৯৭ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়ায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৭১৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারির তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সৃষ্ট ৭.৮ ও ৭.৬ মাত্রার দুটি ভূমিকম্প চলতি শতাব্দীর ষষ্ঠ প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে উঠছে। এর আগে ২০০৫ সালে পাকিস্তানে হওয়া ভূমিকম্পে প্রায় ৭৩ হাজার মানুষ নিহত হন। এদিকে ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরও তুরস্কের ধসেপড়া ভবনগুলোর নিচ থেকে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন খাবার-পানি ও বাতাস ছাড়া আটকে থাকায় কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা একেবারেই কমে গেছে বলে দাবি উদ্ধারকারীদের। তবে ভূমিকম্প আঘাত হানার ১৮২ ঘণ্টা পর গত সোমবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হাতাইয়ে ধসেপড়া এক ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৩ বছর বয়সি এক কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। একই দিনে আদিয়ামান শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে মিরায় নামের ৬ বছর বয়সি এক বালিকাকে উদ্ধার করা হয়। এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে উদ্ধারকাজে ধীরগতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন বেঁচে যাওয়া মানুষ। ক্রমেই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার মাত্রা বাড়ছে।
জানা যায়, পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবের পাশাপাশি, প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়া উদ্ধার অভিযানের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের উদ্ধার অভিযানের পরিসর গুটিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পোল্যান্ডের কয়েকজন উদ্ধারকারী জানান, তারা তুরস্ক ছেড়ে যাবেন। এর আগে জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ জানান, উদ্ধার অভিযান প্রায় শেষ দিকে। এখন আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার দিকে নজর দিতে হচ্ছে। এদিকে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে কূটনীতিকরা জানান, তুরস্ক থেকে জাতিসংঘের ত্রাণ সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
ভোরের আকাশ/আসা