logo
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৯:১৪
রূপগঞ্জে ৫৮ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে ৮০ গ্রামের মানুষ
সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ)

রূপগঞ্জে ৫৮ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে ৮০ গ্রামের মানুষ

ছবিটি চনপাড়া-কালিগঞ্জ সড়কের দাউদপুর বেলদি এলাকা থেকে তোলা

সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৫৮ কিলোমিটার বেহাল সড়কে ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ৮০ গ্রামের মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে সড়কের বেহাল দশা হলেও দেখার যেন কেউ নেই। এই সড়ক যোগে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বড় বড় গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে অটোরিকশা থেকে শুরু করে বেবিট্যাক্সি-ট্রাক-বাসও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলরত এলাকাবাসী।

 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া থেকে দাউদপুর হয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত এ রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এছাড়া ফজুর বাড়ীর মোড় হতে ইছাপুরা বাজার পর্যন্ত এবং ইছাপুরা হয়ে ৩০০ ফিট সড়ক পর্যন্ত রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ কিলোমিটার। মুড়াপাড়া থেকে ভুলতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংযোগ সড়ক ৫ কিলোমিটার। ইছাখালী হতে নগরপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার। ভুলতা গোলচত্বর থেকে আমলাবো পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার, গোলাকান্দাইল থেকে ডহরগাঁও পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার, কালনি বাজার থেকে বেলদি বাজার সড়ক ৫ কিলোমিটার, বরপা থেকে সুতালাড়া সড়ক ৬ কিলোমিটার। কাঞ্চন মায়ারবাড়ি থেকে বিরাব বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার। বিরাব নদীরঘাট থেকে করাটিয়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ও ভায়েলা থেকে মাছিমপুর ক্যানেল সড়ক ৩ কিলোমিটার। উল্লেখিত সড়কগুলোর অবস্থা বেহালদশা। কোনো রকম ভোগান্তির শিকার হয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। শীত মৌসুম শেষ হওয়ার পথে থাকলেও সড়ক মেরামত বা নির্মাণ কাজ তেমন চোখে পড়েনি। ফলে সামনের বৃষ্টির মৌসুমে সড়কগুলোর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়বে।

 

আর এই সড়ক দিয়ে রূপগঞ্জ, ফজর বাড়ী, সাহাপুর, জাহাঙ্গীর পিতলগঞ্জ ব্রাম্মনগাও, শিমুলিয়া, দেবোই, ইছাপুরা, বাগবের, মুশুরি, নগর পাড়া, ইছাখালী, খামারপাড়া, দেলপাড়া, উত্তরপাড়া, বাগবাড়ী, নয়ামাটি, চাঁন খালি, নবগ্রাম, টিনর, ভিংরাব, হারিন্দা, ভুলতা, পাড়াগাঁও, ভায়লা, মর্তুজাবাদ, হাটাবো, মাসুমাবাদ, মঙ্গলকালী, আমলাবো, শিংলাবো, কালী, গোলাকান্দাইল, ডহরগাঁও, কালনি, বেলদি, বরপা, সুতালাড়াসহ প্রায় ৮০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে থাকে। গত কয়েক বছর আগেও উল্লেখিত রাস্তাগুলো অনেক সুন্দর এবং চলাচল উপযোগী ছিল। ছিলনা ভাঙ্গাচুরা ও ধুলাবালি। পূর্বাচল উপশহর, আশপাশে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প, রেডিমিক্স কারখানা ও বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত লোডবাহি বালু, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালামাল বহনকারী গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কগুলো দেবে গিয়ে বড় বড় ভাঙা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে সড়ক দেবে গেছে। এসব বেহাল সড়কের ধুলাবালিতে পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।

 

বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বৃহত্তর পাইকারি কাপড়ের বাজার গাউছিয়া ও রূপগঞ্জ থানায় আসতে গিয়ে এই ভাঙা এবং বেহাল সড়ক দিয়ে আসতে হয়। এছাড়া শিল্প কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তা ব্যবহার করে কর্মস্থলে যায়। বেহাল সড়কে চলাচল করতে গিয়ে শুধু গ্রামের মানুষই ভোগান্তিতে পড়ে না। উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভোগান্তিতে পড়েন। এলাকায় কোনো প্রকার আইনশৃংখলার অবনতির ঘটনা ঘটলে রাস্তা বেহাল ও ভাঙার কারণে থানা পুলিশ বা আইনশৃংখলা বাহিনী সময় মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে না।

 

খামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম লিখন বলেন, ইছাখালী হতে নগরপাড়া রাস্তাসহ অন্যান্য রাস্তাগুলো এখন একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় সময় এলাকার লোকজন বড় বড় গর্তে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে। বাহ্মণখালী এলাকার সংবাদকর্মী মাহাবুব আলম প্রিয় বলেন, আমাদের চনপাড়া কালীগঞ্জ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। পুরো সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্ত হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। পাড়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, মুড়াপাড়া ভুলতা সড়কে আমাদের বাড়ির সামনে সব চেয়ে বেশি বেহাল দশা। এখানে পানি জমে পুকুরে পরিণত হয়েছে। আর এই পানিতে বড় বড় গর্তে গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। রূপগঞ্জ গ্রামের দিপু ঘোষ বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সড়ক বেহাল দশার কারণে রোগীদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে অনেক কষ্ট হয়। রূপগঞ্জ থানার ওসি এ এফ এম সাহেদ বলেন, কোনো জায়গায় ঘটনা ঘটলে ভাঙা রাস্তার কারণে সময় মতো ঘটনাস্থল পৌঁছাতে পারছে না পুলিশ। দ্রুত সড়কগুলো সংস্কার করা হলে সকলেরই উপকার হবে।

 

দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সড়কের অবস্থা বেহালদশা। উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে বলা হচ্ছে দ্রুত মেরামত বা পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক বলেন, সড়ক সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর কর্তৃপক্ষকে সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের জন্য অব্যাহত তাগিদ দেয়া হচ্ছে। বেশ কিছু সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

 

এ বিষয়ে উপজেলার এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, চনপাড়া-কালীগঞ্জ সড়ক ও ফজুরবাড়ীর মোর-ইছাপুরা সড়কটি সংস্কারের বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য ফাইলটি মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন আসলেই সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাবে। এছাড়া ভুলতা মুড়াপাড়া সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এলজিইডিকে দিলে আমরা সড়কের কাজ করতে পারব। এছাড়া এলজিইডির অন্য রাস্তা গুলোর সংস্কার কাজ অতি দ্রুত শুরু করা হবে।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবাল বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভুলতা-মুড়াপাড়া সড়কের সংস্কার কাজের দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

 

ভোরের আকাশ/আসা