কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে তুলা উৎপাদনের একমাত্র অবলম্বন চিরচেনা শিমুল গাছ। ওই শিমুল কিংবা তুলা গাছ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এখন যেন নিখোঁজের তালিকা কিংবা সোনার হরিণ।
জেলা দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে একটা সময় বসতবাড়ির আঙিনায় এবং সড়কের দু’পাশে অসংখ্য শিমুল গাছ দেখা যেত। বাংলা বছরের মাঘ-ফাল্গুন মাসে শিমুল গাছজুড়ে লাল কিংবা গোলাপি রঙের ফুল জানান দিত বসন্তের আগাম বার্তায় কোনো বাড়িতে শিমুল গাছ আছে। অথচ বৃহৎ ও মনোরম সৌন্দর্যের এ শিমুল গাছ ২-৪ গ্রাম ঘুরলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। প্রযুক্তির যুগে কালের আবর্তে রক্তচূড়া নামে সেই শিমুল গাছ অতীতে গ্রামীণ ঐতিহ্য বহন করলেও সময়ের বিচারে অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। শিমুল গাছ তুলা উৎপাদন ছাড়াও ফুল ও ফল নিয়ে একটা সময় সাহিত্য চর্চা হতো। ওই গাছের শিকড় এবং বাকল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার, তকতা ও কাঠ দিয়ে অবকাঠামো তৈরির সরঞ্জাম, হার্ডবোর্ড এবং দেয়াশলাই তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো। অথচ ওই মূল্যবান গাছটি রক্ষণাবেক্ষণে উপজেলা কৃষি ও বন বিভাগ কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না।
সূত্রটি আরো জানায়, একটা সময় ওই শিমুল গাছের ছায়ায় পথচারীরা বিশ্রাম নিত, গ্রাম্য খেলাধুলাসহ বৈশাখী মেলা আয়োজন ছিল দেখার মতো। অথচ ওই গাছটি আজ নানা কারণে বিলুপ্তির পথে। মূলতঃ ওই গাছটি প্রাকৃতিকভাবেই বাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত ভূমিতে অনাদরে বেড়ে উঠে ২-৩ বছরের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে কিন্তু কেউ এ গাছটিকে বাণিজ্যিকভাবে রোপণ করে না। ফলে একদিকে মানুষ লেপ-তোষক, আর বালিশ বানাতে মানসম্মত তুলার সংকটে এখন গার্মেন্টস জুট বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে এবং শিমুল গাছ বিলুপ্তিতে পরিবেশ ও ভারসাম্য রক্ষার ঝুঁকিতে পড়েছে এলাকার মানুষ। স্থানীয় কৃষি ও বন বিভাগ একটু আন্তরিক হলে শিমুল গাছ রোপণ ও বিপণন করতে স্থানীয় কৃষকরা আগ্রহ দেখাত এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতায় এগিয়ে এলে শিমুল গাছ চাষে অনেকটা লাভবান হতো এলাকার মানুষ অভিমত স্থানীয় পরিবেশবিদদের।
এ ব্যাপারে ত্রাণ দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভোরের আকাশ/আসা