logo
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১১:০৬
খাদ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী, নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবন বিপর্যস্ত
জয়পুরহাটে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন
রাশেদুজ্জামান রাশেদ, জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

জয়পুরহাট শহরের পূর্ব বাজারের সবজির দোকান।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগে গেছে। চাল, ডাল, তেল, মাছ, গরুর মাংস, সবজিসহ প্রতিটি পণ্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ বাধ্য হয়েই গরুর গোশতের বদলে একটু কম দরে খাসির মাথা, মুরগির বদলে বয়লারের খুচরো গোশত, ছাগল-ভেড়ার পা, মুরগির হাড়-গলা-গিলা-কলিজির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া হাজারো নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত।

 

সবজির ভরা মৌসুমে সংসারের চাহিদামতো তরিতরকারি ক্রয়ের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন অনেক ভোক্তা। আমদানিকারক, মিলার, আড়তদার, মজুতদার, ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন। অথচ সরকারের দায়িত্বশীলদের দাবি, বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পণ্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

জয়পুরহাটে রমজান শুরু আগেই বাজারে যেন আগুন লেগেছে। শহরের পূর্ব বাজার, বউ বাজার, নতুনহাট ও মাছুয়া বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, কিছু দোকানে মূল্যতালিকা থাকলেও সব পণ্যের দাম মূল্য তালিকায় লেখা নাই। কেউ কেউ মূল্যতালিকা খুলে রেখেছেন। এ ছাড়াও মূল্যতালিকায় পণ্যের দামের ব্যবধান রয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়ার পরও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলছে।

 

বলা যায়, সরকারের যত অর্জন রয়েছে সব অর্জনকে ম্লান করছে বাজার সিন্ডিকেট। শুধু তারিখ পাল্টে কোনো কোনো দোকানে গতকালের মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য।

 

গতকাল রোববারের বাজার মূল্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, সীম ২০ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা, খিরা শশা ২০ টাকা, শশা ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, বড় মাপের মিষ্টি লাউ ১৫০ টাকা, রঙিন বাঁধাকপি প্রতিটি ৫০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ২৫ টাকা, ব্রুকলি প্রতিটি ৫০ টাকা, করলা ১৬০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০-৮০ টাকা। টমেটো পাইকারি দাম প্রতি কেজি ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আলু পাইকারি ১৭ টাকা, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা।

 

ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৩০, সোনালি ৩০০ টাকা, লেয়ার ৩১০, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা কেজি, বোতল সয়াবিন ১৮৫ টাকা কেজি, সরিষার তেল ২০০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা, আটা ৫৫ টাকা, মশুর ডাল ১৩০ টাকা কেজি, ছোলা বুট ৮৫ টাকা। এ ছাড়া গুঁড়া মশলা, গরম মশলার দামও যে যেভাবে পারে ক্রেতাদের কাছে ইচ্ছা অনুযায়ী বিক্রি করছে।

 

মাছুয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, পণ্যের মূল্যতালিকা আছে কিন্তু সবাই নামিয়ে রাখে এজন্য আমিও নামিয়ে রাখছি। মূল্যতালিকায় লেখা তো দূর অনেক দোকানে তালিকাই নাই। আমরা নির্দেশ মানলেও অনেক ব্যবসায়ীরা তা মানে না। যারা মূল্যতালিকার নির্দেশ মানেননি, তাদের বিষয়টি কেউ দেখতেও আসেন না। আমরা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে এনে খুচরা বিক্রি করি। আমাদের পণ্যের দাম পাইকারি ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করে দেয়। আমরা বেশি দামে কোনো পণ্য বিক্রি করি না।

 

জয়পুরহাট সদরের বৈরাগী মোড় থেকে আসা ক্রেতা রাব্বি ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এত ছিল না। এখন প্রতিটা দিন অতিবাহিত হচ্ছে আর পণ্যের দাম বেড়ে চলছে। বেশি দামের সবজি কেনার আগে সংসারের বাকি খরচের কথা মাথায় রাখতে হয়। বর্তমানে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বেড়েছে।

 

এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার নিয়মিত মনিটরিং করলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত। সামনে রোজা আসছে তখন পণ্যের মূল্য আরো বেড়ে যাবে। রোজায় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি এইটা স্বাভাবিক। প্রতিবার রোজায় সবকিছু বেশি দামে কিনতে হয়।

 

কাচারি বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা সামিউল বাবু, মধ্যবিত্তদের জন্য কাঁচা বাজারসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যটা একটু বেশিই। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি রাখে। বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগে ক্রেতাদের পকেট কাটছে নিয়মিত।

 

কাচারি বাজারে আরেক রিকশাচালক ক্রেতা স্বপন শেখ জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করি। আবার হঠাৎ কোনো দিন শরীর অসুস্থ হলে রিকশা নিয়ে বের হতে পারি না। মাত্র কয়েকশ টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে চাল, তেল, আলু ও হালকা কিছু সবজির বাজার করলেই টাকা শেষ হয়ে যায়। গরুর মাংস তো দূরের কথা ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারি না। এখনো রমজান আসেনি আমি সংসার নিয়ে চলব কীভাবে?

 

এ বিষয়ে জেলা কৃষিবিদ ওবায়দুল্লাহ মুসা বলেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন সমসাময়িক সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে ও বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এক মাস পর মুসলমানদের পবিত্র রমজান শুরু হবে।

 

রমজান উপলক্ষে এখন থেকেই বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

 

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক ইফতেখার আলম বলেন, সরকারি মূল্যতালিকার চেয়ে বেশি বিক্রির নিয়ম নেই। প্রতি মাসে তিন দিন বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তাদের কাছে যে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি