জাহাঙ্গীর আলম, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি সংঘবদ্ধ মাটি ব্যবসায়ী চক্র বনভূমিসহ বিভিন্ন উঁচু টিলা ভেকু দিয়ে কেটে নিয়ে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে শ্রেণি পরিবর্তনসহ ভূমি ধসের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিরান হচ্ছে বনভূমি।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণে অপরিকল্পিতভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু’পাশসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে একের পর এক জলাশয় ও নিচু জমি ভরাট চলছে।
একটি সংঘবদ্ধ মাটি ব্যবসায়ী প্রভাবশালী ভেকু ও ড্রামট্রাক মালিকরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তারা ভেকু দিয়ে বনাঞ্চলের বিভিন্ন উঁচু টিলা কেটে নিয়ে এসব জলাশয় ভরাট করছেন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে।
উপজেলার পাড়াগাঁও গৌরিপুর গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা কৃষকলীগের সেক্রেটারি আতিকুল ইসলাম জাকারিয়ার ছত্রছায়ায় স্থানীয় মেম্বার শাহাদাত শিকদার ও মাটি ব্যবসায়ী মজিবর সরকারের নেতৃত্বে ভেকু দিয়ে ৯৫৪, ৯৫৭ ও ৯০৭ নম্বর দাগের উঁচু টিলা ভেকু দিয়ে কেটে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে চলেছেন। আর এসব মাটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার হবিরবাড়ি এলাকার মাহবুবুল আলম ওরফে টুপি আলম, সুবান মন্ডল ও নুরুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনের ভেকু ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি কাটার কাজ করছেন। স্থানীয় নবী নেওয়াজের স্ত্রী রীনা আক্তার ও তার কলেজপড়ূয়া মেয়ে ইয়াসমিন জানান, ৯০৭ দাগে তাদের ৬ একর ৪৮ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমি কমমূল্যে বিক্রির জন্য ফিনিক্স কোম্পানির পক্ষে মাটি ব্যবসায়ী মজিবর রহমান তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
কিন্তু জমি বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় তিনি তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ভেকু দিয়ে কেটে নিয়ে তাদের জমি দখল করে বসতঘর ঘেঁষে বিশাল গভীর পুকুর নির্মাণ করছেন। এতে তাদের চলাচলসহ বসতঘর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। মাটি কেটে পুকুর করার কারণে তাদের বসতঘরটি যেকোনো সময়ে ভেঙে যেতে পারে। এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বারের সাথে কথা বলেও কোনো বিচার পাচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ।
ইয়াসমিন আরো অভিযোগ করেন, বেশ কয়েক বছর আগে তাদের বসতঘরের পাশে পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করা হলেও স্থানীয় মজিবর সরকারের বাধার কারণে তারা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মজিবর সরকার জানান, উপজেলা কৃষকলীগের সেক্রেটারি আতিকুল ইসলাম জাকারিয়ার নির্দেশে ফিনিক্সের মাটি কাটার কাজ হচ্ছে। তবে আতিকুল ইসলাম জাকারিয়া তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার নাম বিক্রি করে মজিবর সরকার ও স্থানীয় মেম্বার শাহাদত ফিনিক্সের মাটি কাটার কাজ করছেন।
ভেকু মালিক মাহবুবুল আলম ওরফে টুপি আলম জানান, তিনি ওই মাটি কাটার সাথে জড়িত নন। তার ভেকু ভাড়ায় নিয়ে ওইখানে মাটি কাটার কাজ হচ্ছে।
ভালুকা রেঞ্জের কাদিগড় বিট অফিসার ফিরোজ আল মামুন জানান, ফিনিক্স কোম্পানি তাদের এলাকা থেকে মাটি কাটছে না। যদি কাটতে আসে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি