logo
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:৫১
বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত : পুলিশ
অগ্নিকান্ডে বিপুল অঙ্কের ক্ষয়ক্ষতির মুখে গুলশান-বনানী
ইমরান খান

অগ্নিকান্ডে বিপুল অঙ্কের ক্ষয়ক্ষতির মুখে গুলশান-বনানী

ইমরান খান: রাজধানীর গুলশান-বনানী এলাকায় কোনো ফায়ার স্টেশন নেই। ফলে এসব এলাকায় অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা ঘটলে পাশের স্টেশন থেকে ছুটে আসতে হয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের। এ কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয় অভিজাত এলাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

 

তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, রোববার গুলশান-২ এর ১২তলা আবাসিক ভবনে আগুন লাগার ১৫ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, এসব এলাকায় অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান বরাদ্দের চেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয়া হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর এত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফায়ার স্টেশন না থাকার পেছনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দায়ী করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

 

সোমবার দুপুরে গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কে আগুনের শিকার বাসা পরিদর্শন করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বিল্ডিং কোড মেনেই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতির জন্য গার্ড ও বাসিন্দারা প্রশিক্ষিত ছিল না। গুলশান-বনানীতে কোনো ফায়ার স্টেশন নেই কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিক বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে বরাদ্দ দেয়ার মতো জায়গা নেই।

 

রাজউককে এ বিষয়ে বারবার জানানো হলেও তাদের পক্ষ্য থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। মেয়র বলেন, আমরা ফ্যাক্টরিতে বা গার্মেন্টসে প্রতিনিয়ত অগ্নিমহড়া করছি, সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু বাসাবাড়িতে সাধারণত সেটা হয় না। এ সময় আগুন বা যেকোনো বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য জনসাধরণকে সচেতন হওয়ার আহব্বান জানান তিনি। এর আগে ২০২১ সালে বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকার একটি ভবনে অগ্নিকান্ডের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩ ঘণ্টার মতো সময় লাগে ফায়ার সার্ভিসের।

 

এছাড়া ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব হওয়ায় ২৭ জনের প্রাণহানি হয়। ওই অগ্নিকান্ডে আহতও হয়েছিলেন বহু মানুষ। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যায় গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১৪তলা ভবনের ১১তলায় আগুন লাগে। একপর্যায়ে আগুন ভবনের ১২তলায় ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও। এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

 

পুলিশ জানায়, নিহত দুজনই আগুন থেকে বাঁচতে ছাদ থেকে লাফিয়ে আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে রোববার রাতে একজন ও সোমবার ভোরে চিকিসাধীন অবস্থায় রাজু নামে আরেকজনের মৃত্যু হয়। তারা শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় শামা রহমান নামে এক নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন।

 

আহত আরো দুজনও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। তবে তারা ঝুঁকিমুক্ত। দগ্ধদের চিকিৎসায় এরই মধ্যে ১৮ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে সোমবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আবদুল আহাদ।

 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ভবনটিতে আগুনের সূত্রপাত।’ এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) বাবুল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা দেশের সব জায়গায় ফায়ার স্টেশন চাই। বারিধারা, কুর্মিটোলা ও তেজগাঁওয়ে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে।

 

গুলশান-বনানীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে এ তিন এলাকার ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা উদ্ধারে যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, বর্তমানে এ দুটি এলাকায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা নেই। বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার।’

 

ভোরের আকাশ/নি