logo
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:২৪
সাজা বাতিলের আগে খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠে নামানোর পরিকল্পনা নেই বিএনপির
এম সাইফুল ইসলাম

সাজা বাতিলের আগে খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠে নামানোর পরিকল্পনা নেই বিএনপির

এম সাইফুল ইসলাম: হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠে আলোচনা শুরু হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে। দুই মামলায় নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা শর্তসাপেক্ষে স্থগিতের পর তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কিনা এ প্রসঙ্গে সরকারের মন্ত্রীরা এখন ভিন্ন ভিন্ন মত দিচ্ছেন।

 

একসময় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে হার্ডলাইনে থাকলেও হঠাৎ তাদের সুর নরম দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি দল থেকেই হঠাৎ করে কথা বলা শুরু হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নীরব থাকলেও মন্ত্রীরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় নানা প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয়েছে।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন করে বিষয়টি সামনে আনার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তারা বলছেন, সরকারি দলের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক না কেন, দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি বা তার সাজা বাতিলের আগে তাকে রাজনীতির মাঠে নামানোর পরিকল্পনা নেই বিএনপির।

 

জানা গেছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়েছিল সরকার।

 

তিনি নিজ বাসভবনে থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এমন শর্তে তার সাজা স্থগিত করে কারামুক্তি দেয় সরকার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার তার কারাদন্ড ৬ মাসের জন্য স্থগিত করার পর কারাগার থেকে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। তারপর থেকে ৭৭ বছর বয়সি খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়াবাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। মাঝে তিনি দুই দফা করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছিলেন।

 

খালেদা জিয়াকে নিয়ে নানা আলোচনা করলেও তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন বা আইনগতভাবে রাজনীতি করতে পারবেন কিনা এমন আলোচনা ছিল না বললেও চলে। কিন্তু গত কয়েকদিন হঠাৎ করেই সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়টি আবারো সামনে চলে আসে। বিশেষ করে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে উঠে আসে খালেদা জিয়া ইস্যু।

 

গত বুধবার ঢাকায় নিম্ন আদালতের বিচারকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির ক্ষেত্রে রাজনীতি করা নিয়ে কোনো শর্ত দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে কোনো শর্ত নেই। তাই তার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে বাধা আছে বলে আমি মনে করি না।

 

তবে যেহেতু তিনি সাজাপ্রাপ্ত, তাই তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আইনমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব ইন্ট্যারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত পৃথক এক অনুষ্ঠান শেষে একই কথা বলেন।

 

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার দন্ড দিয়েছেন আদালত। তিনি সেই দন্ড থেকে মুক্তি পাননি। মানবিক কারণে সরকার তাকে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। তাহলে তার রাজনীতি করার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? দন্ডিত একজন কয়েদি হিসেবে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই।

 

একই দিন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স ও স্বাস্থ্য বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেই শর্তানুযায়ী তিনি রাজনীতি করতে পারেন না। বুধবার আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও বক্তব্য দেন।

 

এদিকে অনেকে মনে করছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সম্প্রতি পশ্চিমাদের চাপ ও চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চেষ্টা চালাবে সরকার। সেই জায়গা থেকে সরকার নরম সুর দেখাচ্ছে। কারণ কিছুদিন আগেও সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে চাইলে তাকে জেলে যেতে হবে।

 

কিন্তু হঠাৎ আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীদের সুর নরমে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এমন বক্তব্য দিলেও খালেদা জিয়ার রাজনীতির ইস্যুতে অনেকটাই নীরব বিএনপি। দলটির নেতারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলছেন না। এমনকি গণমাধ্যমেও দলটির নেতারা তেমন কোনো কথা বলতে চাইছেন না। তবে বিএনপি নেতারা হঠাৎ এ ইস্যু সামনে আনাকে কোনো ষড়যন্ত্র কিনা, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।

 

তারা মনে করছেন, বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই আওয়ামী লীগের এমন উদ্যোগ হতে পারে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারামুক্ত হয়ে বাসায় রয়েছেন। যতক্ষণ এ শর্ত প্রত্যাহার না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সক্রিয় হতে পারছেন না। তবে দলের চলমান আন্দোলন সফল হলে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন।

 

ন্যায়বিচার পেলে তিনি মুক্ত হবেন, তখন সক্রিয় হবেন রাজনীতিতে।’ স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। উনি কীভাবে সক্রিয় হবেন? উনি তো এখন গৃহবন্দি, শারীরিকভাবে অসুস্থ।’ স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জোর করে বন্দি রাখা হয়েছে। বন্দি অবস্থায় তার সক্রিয় রাজনীতি করার কোনো অবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই। তার অবর্তমানে আমাদের নেতা তারেক রহমান দলের হাল ধরেছেন এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

 

টুকু বলেন, ‘আমরা যদি তাকে মুক্ত করতে পারি, তাহলে অবশ্যই তিনি দলের নেতৃত্ব দেবেন।’ এছাড়া খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ তার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ আদালত ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়ার পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া।

 

২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এ মামলায় তার আপিল খারিজ করে দেয়ার পর শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকার আরেকটি বিশেষ আদালত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আদালত তাকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন।

 

ভোরের আকাশ/নি