ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে...। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয় সংগীতের এই লাইন দুটির সঙ্গে মিল রেখে প্রকৃতি এখন সেজেছে অপরূপ রূপে। প্রকৃতির ঋতুরাজ বসন্তে মুকুলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে আমগাছগুলো। আমের শাখায় শাখায় বাতাসে দোল খাচ্ছে। বাতাসে ম-ম ঘ্রাণ মানুষের মনকে বিমোহিত করে। মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে সোনালি রঙের মুকুলগুলো। উপক‚লীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে এখন সর্বত্র এমন দৃশ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপকূলীয় অঞ্চলে আমবাগানের সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে গেছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ।
চাষিরা জানাচ্ছেন, আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা।
মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে বাগানসহ ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছগুলো। এ বছর বড়, ছোট ও মাঝারি সব ধরনের গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের ম-ম গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে স্বপ্ন। বাগানে বাগানে আম্রপালি, ল্যাংড়া ও ফজলি আমের ঘ্রাণ আর ঘ্রাণ।
ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম বাগানের মালিক কৃষ্ণ কান্ত ঘরামী বলেন, মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী কৃষিবিদ লিটন কুমার ঢালী বলেন, জানুয়ারি মাসজুড়ে বিভিন্ন জাতের আম গাছে মুকুল আসে। প্রতিকূল আবহাওয়া যেমন শীতের তীব্রতা, তাপমাত্রা ও ঘন কুয়াশার কারণে গাছের মুকুলে ছত্রাক ধরে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে দেশি জাতের বিশেষ করে আঁটি ও ফজলি আম গাছের মুকুল ছত্রাকে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘন কুয়াশার কবলে না পড়লে এবং অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এসব মুকুলে ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেতাগী পৌরসভাসহ উপজেলায় সাত ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জের বাড়িতে রয়েছে স্বাভাবিক আম গাছ। সব গাছই ভরে গেছে মুকুলে। গত কয়েক বছর ধরে চাষিদের আগ্রহের কারণে এ উপজেলায় ক্রমশ বেড়েছে আমের বাণিজ্যিক চাষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, বাগানের গাছেগুলোতে আমের মুকুলে ভরে গেছে। তবে কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে আমের ভালো ফলন হবে। চাষিদের আমের মুকুল রক্ষায় পোকা দমনে বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি