logo
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৩৮
প্রিয় সর্প আমার
রাইয়ান উল ইসলাম

প্রিয় সর্প আমার

রাইয়ান উল ইসলাম: ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক চুক্তি হলো। রাত্রি চায় কালই বিয়ে করতে। কালো শাড়ি পরবে সে। রাতুল যেন ঘোরের মধ্য আছে। সে বাধ্য ছেলের মতো সব কথাতেই সম্মতি দিচ্ছে । পরদিন সকালে টিউশনি থেকে জমানো টাকার সবটুকু নিয়ে বের হল রাতুল। এই টাকায় বিয়ে হবে কিনা কে জানে। রাত্রি রাতুলের চেয়ে সাড়ে তিনমাসের বড়।

 

অথচ ম্যারেজ রেজিস্ট্রার সন্দেহ করলো বাল্যবিবাহের। তার ধারণা রাত্রির বয়স পনেরোর বেশি না। এদিকে রাতুলের এনআইডি কার্ডে বয়স একুশ হতে এখনো দশ মাস বাকি। কাজেই ওরা কোথাও বিয়ের আবেদন করতে পারলো না। এখন তারা নিরুদ্দেশ ভাবে হাটছে। গত এক ঘণ্টায় রাত্রি একটা কথাও বলেনি।

 

হঠাৎ রাতুল ওর হাত ধরে থামিয়ে চোখে চোখ রেখে কিছু জ্ঞানী-কথা বলতে শুরু করলো যার সারমর্ম এই যে, পারস্পরিক বিশ্বাস থাকলে বিয়ের তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। আর সামাজিক স্বীকৃতি পরের প্রশ্ন। কারণ এক্ষুনি তারা একসঙ্গে থাকছে না।

 

লেকচার শেষে রাতুল বললো ‘যদি সবসময় এই সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল থাকার মানসিকতা থাকে, তাহলে আমি তোকে এই মুহূর্তেই বিয়ে করলাম। তুইও করে ফেল। আর নয়তো থাক।’ রাত্রি চোখ বন্ধ করে কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে বললো, ‘করলাম’।

 

সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইনউড ক্যাফেতে কাটালো ওরা। রাত্রি চুপচাপ একেরপর এক সিগারেট টেনে গেল। রাতুল পুরোটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে একটা কিছু বুঝতে চেষ্টা করেছে। কিছুক্ষণ বাদে রাত্রিকে বাসায় পৌঁছে দিতে রওনা হলো রাতুল। সোবাহানবাগ ঢুকতেই গলির মাথায় বৃত্তকে দেখা গেল। রাত্রির দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখে নির্লিপ্ত হাসি। যেন রাত্রির দেখা সে প্রতিদিনই পায়। রাত্রি দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। ঠোঁট একে অপরকে আকর্ষণ করলো ঠিক দেড় বছর আগের শেষ দেখার মতো ।

 

রাতুল দূরে দাঁড়িয়ে সেকেন্ড পাচেক ওদের দেখলো। তারপর পিছন ঘুরে হাটতে শুরু করলো। রাতুলের পা যেন বারবার কাদায় তলিয়ে যাচ্ছে। মানসিকভাবে রাতুল প্রস্তুত ছিল। সে জানতো জীবনের যেকোনো একসময় এরকম কিছু একটা ঘটতে পারে। তাই বলে তার কষ্ট বিন্দুমাত্র কম হচ্ছে না।

 

দ্রুত হেঁটে ইন্দিরা রোড থেকে পশ্চিম রাজাবাজারের গলিতে ঢোকামাত্রই গলির মুখে থামানো একটা রিকশার সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেল রাতুল। রাস্তায় কেউ নেই। এই রিকশার চালকও না। রাতুলের চশমাটা পড়ে গেছে। এখন চশমা ছাড়া চশমা খোজা অসম্ভব। এর মধ্যে রাত্রির কল।

 

রাতুল রিসিভ করতে গিয়েও করলো না। তখনই ম্যাসেজ এলো, ‘জানতাম কল ধরবি না। তুই একটু আসবি প্লিজ? বৃত্ত রিহ্যাব থেকে ফেরার পর নতুন জীবন শুরু করেছে। ও আর ফিরবে না। আমার আবারো নিজেকে ল্যুজার মনে হচ্ছে।’

 

মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে রাতুল লেখলো, ‘আই আ্যম আ লুজার ট্যু। বাট আই স্টিল ডিজার্ভ ট্যু বি লাভড।’

 

রাত ৮টা এক, কাঠালবাগান। গত আধঘণ্টা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। রাতুলের ফোন ভিজে এখন অকেজো। সে এক দোকান থেকে একটা ফোন করলো।
-হ্যালো। কে?

 

এপাশ থেকে রাতুলের কণ্ঠলীন আবৃত্তি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার লাইন,

 

চতুর্দিকে বইছে যখন বৈরি হাওয়া

 

তোমার কাছেই তখন আমার ফিরে যাওয়া।

আকাশজুড়ে ঝড়ো বৃষ্টি, সূর্য উধাও,

তুমিও যদি এক পলকের দেখা না দাও

দৃষ্টি আমার আটকাবে কোন দৃশ্যপানে?

বসন্ত কি ভস্ম হবে অগ্নিবাণে?

কয়েক সেকেন্ডের শীতল নীরবতা। এই সময়টা প্রেমিকারা গলা ওপচে আসা কান্না থামাতে নেয়।

-গলার এই অবস্থা কেন? তোমার সাপ্তাহিক ঠান্ডা লাগা এখনো যায়নি?

 

কথাটা বলতে গিয়ে ঐশী নিজেই জমে যাচ্ছিল।

 

-বাসার নিচে এসেছি। একটু বারান্দায় আসবে? যদিও আমি কিছু দেখতে পাবো না। সঙ্গে চশমা নেই।

 

ঐশীর হৃদয়ে শীতল প্রস্তর, এবার গলতে শুরু করলো। সে কাপাঁ কাপাঁ কণ্ঠে তিনটে ম্যাজিকাল ওয়ার্ড বললো,

 

‘দাড়াও। নিচেই আসছি’।

 

ভোরের আকাশ/নি