logo
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৩:৫৪
কুমিল্লায় হোটেল-রেস্তোরায় ভেজাল খাবার বিক্রি: বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লায় হোটেল-রেস্তোরায় ভেজাল খাবার বিক্রি: বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের একটি হোটেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার পরিবেশন

কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলাগুলোর হাট-বাজারজুড়ে হোটেল রেস্তোরাসহ নানা জাতীয় খাবার দোকানগুলোতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিদ্যমান। বাসী-পঁচা খাবার বিক্রি এখন যেন ওপেন সিক্রেট। ওইসব খাবার দোকানগুলোতে ভেজাল খাবার বিক্রির অভিযোগ মিলেছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্রের ভাষ্য, আমাদের দৈনন্দিন কর্মজীবনের ব্যস্ততায় খাবারের প্রতি তেমন নজর দেওয়ার সময় হয় না। কোথায় খাচ্ছি-কি খাচ্ছি সেটাতেও আমরা গুরুত্ব দেই না। হোটেল রেস্তোরাসহ খাবার দোকানগুলোতে রং বেরংয়ের চটকদার পণ্যের প্রতি লোভ আমাদের বেশি।

 

বিশেষ করে যাদের বাসায় রান্না করার সময় নেই কিংবা কর্মব্যস্ততার জন্য অনেক সময় হোটেল রেস্তোরায় খাবার খেতে হয়। আবার ফাষ্টফুড খেতে নানা কারণে চিকিৎসকগণ নিষেধ করা স্বত্তেও আমরা তা খাচ্ছি।

 

তবে চলমান করোনাকালে নানা খাবার দোকানগুলোর ক্ষেত্রে ভয়টা কি খাবারে নয় বরং ভয়টা হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, পার্সেল প্যাকেজিং কিংবা সরবরাহ ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা মানা হচ্ছে কিনা ?

 

হোটেল বয়দের পোশাক, খাবার ডেলিভারী ও প্রস্তুত কারখানায় পরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ অভিজ্ঞ রন্ধন সামগ্রীসহ নানাহ সরঞ্জামে সর্তকতা নেই বললেই চলে। যে যার মতো করে চালাচ্ছে খাবার দোকানগুলো, কোন নিয়মনীতির বালাই নেই।

 

স্থানীয় প্রশাসন হোটেল রেস্তোরাসহ খাবার দোকানগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অর্থদন্ড করলেও ওই ব্যবসায়ীদের দমানো যায়নি।

 

যদিও এখন পর্যন্ত খাবারের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। কারন ভালভাবে রান্না করা হলে খাবারে করোনা ভাইরাস বেঁচে থাকার কথা নয়। তবে ফুড প্যাকেজিং কিংবা পার্সেল ডেলিভারী করতে যিনি নিয়োজিত তার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

 

জেলা দক্ষিণাঞ্চলের বে-সরকারি হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত হোটেল রেস্তোরা কিংবা নানা খাবার দোকানে খাবার খাওয়ায় মানুষের শরীরে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। কারণ ওইসব খাবারে ব্যবহার করা হয় মনোসোডিয়াম, গ্লাটামেট, পলিথিন, কালার রংসহ নানা রাসায়নিক দ্রব্য। ফলে মানবদেহে বাসা বাঁধতে পারে পারে জটিল মারাত্মক রোগ। প্রসস্ত করতে পারে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পথ।

 

যদিও আমাদেও দেশে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২৩ নং ধারা অনুযায়ী, কোন খাবার দোকানের মালিক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য কিংবা তার কোন উপকরণ যেমন-ক্যাডিয়াম, সেগারিন, ইফরিয়া, ঘন চিনি, ক্যালসিয়াম কারবাইড দ্রব্যের ফ্লেবার, ফরমালিন, সোডিয়াম, সাইপ্লামেট, কিটনাশক বা বালাইনাশক, পিসিভি তৈলসহ খাদ্যের রন্ধক স্বাদে আকর্ষন সৃষ্টিকারী কোন বিষাক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়া সহায়ক কোন খাবারে এবং খাদ্য উপকরনে ব্যবহার আইনগত অপরাধ।

 

প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া ওই দ্রব্যের খাবার গ্রহণ জনিত কারণে ৫ বছরের কম বয়সে আক্রান্ত হওয়া ৪৩ শতাংশ শিশু-কিশোরের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার প্রানহানী ঘটে। এ অঞ্চলের হোটেল রেস্তোরার মালিকরা সরকারি কোন নিয়মনীতি মানেন না।

 

সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর কোন পদক্ষেপ না থাকায় যে যার মতো করে খাবার দোকানগুলো চালাচ্ছে।

 

সূত্রগুলো আরও জানায়, ওইসব খাবার প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষতিকর নানা রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রনের ফলে মানবদেহে চুলকানি, জন্ডিস, ডায়রিয়াসহ নানা জটিল রোগের পাশাপাশি শরীরের যকৃত, বক্ষ, বায়ুনালী, রক্তনালী ও গলব্লাডারসহ শরীরের নানান অংশে ক্ষতি সাধন করতে পারে। এমনকি কিডনী, হার্টসহ ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া ইট ও কাঠেরগুড়া মিশানো খাবারের মসল্লা, ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা,

 

মুড়ি, চাল, চিনি, মিষ্টি, চাপ, গ্রিল, হালিম, চটপটি, কেক ও বিস্কুটসহ নানান জাতীয় খাবারগুলো ভেজাল মুক্ত নয়। ৮৫শতাংশ মাছে ফরমালিন, শাক সবজিতে বিষাক্ত ষ্প্রে, ফল-ফলাদিতে কার্বাইড, ইথোপেন, ফ্রিজারভেটিভসহ ক্ষতিকর নানাহ বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে মানবদেহে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের ৫টি উপজেলা ও পৌরসভার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি