logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:৩৮
তিনবার দরপত্র আহব্বান করা হলেও ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি
বাবলুর রহমান বারী, রংপুর

তিনবার দরপত্র আহব্বান করা হলেও ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি

বাবলুর রহমান বারী, রংপুর: রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহে ২০২১-২২ অর্থবছরে তিনবার দরপত্র আহব্বান করা হলেও রহস্যজনক কারণে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে পারেননি টিএইচও।

 

চলতি অর্থবছরেরও ৯ মাস অতিবাহিত হচ্ছে, তবুও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। ২০২০-২১ অর্থবছরের ঠিকাদারই ভর্তিরত রোগীদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে দুইজন টিএইচও আরশাদ হোসেন ও সিদ্দিকুল ইসলাম বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

 

হাসপাতালের দুইজন কর্মচারী জানান, গত অর্থবছরে টিএইচও আরশাদ হোসেন দুইবার দরপত্র আহব্বান করে ঠিকাদার নিয়োগে ব্যর্থ হন। তিনি অন্যত্র বদলি হওয়ার পর এখানে টিএইচও হিসেবে যোগদান করেন সিদ্দিকুল ইসলাম। সিদ্দিকুল গত বছরের ২৭ মে তৃতীয়বারের জন্য গোপনে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

 

ওই বছরের ১০ জুন একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেই দরপত্র বাতিল করা হয়। সময়ের অভাবে আর ওই অর্থবছরে দরপত্র আহব্বান করতে পারেননি তৎকালীন টিএইচও।

 

উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরের জন্য গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দরপত্র ফেলার শেষ তারিখ ছিল ৪ অক্টোবর। খাদ্যে ১৬টি দরপত্র জমা পড়ে। ওইদিনই দরপত্র খোলা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, (২০১৯-২০) ও (২০২০-২১) অর্থবছরে অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার করে ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে হাসপাতালে পথ্য সরবরাহ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস। ২০২১-২২ অর্থবছরে আব্দুল কুদ্দুসের পাশাপাশি সেখানে অন্যের লাইসেন্স দিয়ে টেন্ডারে অংশ নেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফারুক সরদার মধুও।

 

কিন্তু দুজনেই পথ্য নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তাদের গ্রুপিং এর কারণে ওই অর্থবছরে তিনবার দরপত্র আহব্বান করেও কাউকে ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আব্দুল কুদ্দুস টেন্ডার ছাড়াই ওই অর্থবছরসহ এই অর্থবছরে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিদ্দিকুল ইসলাম গত বছরের ৫ ডিসেম্বর পদোন্নতি নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার এক মাস আগে ফারুক সরদারের কাগজপত্র স্বাক্ষর করে ঠিকাদার অনুমোদনের জন্য কাগজপত্র রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠান। সেখানে গিয়ে টিএইচওর বিরুদ্ধে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন আব্দুল কুদ্দুস। এরপর ২০ ডিসেম্বর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নবাগত টিএইচও আব্দুল মতিনকে একটি পত্র দেয়া হয়।

 

সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, এখানে পাঠানো ঠিকাদারের কাগজপত্রে খাদ্যের তালিকার সঙ্গে বর্তমান বাজারের কোনো মিল নেই। তাই পুনর্মূল্যায়নের জন্য বলা হলো। কিন্তু রোববার পর্যন্ত ডা. আব্দুল মতিন ওই পত্রের সাড়া দেননি।

 

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফারুক সরদার মধু বলেন, বিধি অনুযায়ী আগের টিএইচও ঠিকাদার নিয়োগের জন্য আমাদের কাগজপত্র সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ঠিকাদার অনুমোদন হচ্ছে না।

 

মধু অভিযোগ করে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে খাদ্যে ঠিকাদার নিয়োগে টালবাহনা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর এই সুযোগে আব্দুল কুদ্দুস তখন থেকে হাসপাতালে নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছেন।

 

তবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বিধি অনুযায়ী পথ্য’র টেন্ডার আমি পাই। কিন্তু আগের টিএইচও সুবিধা নিয়ে অন্যের কাগজপত্র জেলায় পাঠান। তবে তিনি নিম্ন মানের খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

 

মুঠোফোনে বদলি হওয়া টিএইচও সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, কারো কাছ থেকে সুবিধা নেইনি। বিধি অনুযায়ী খাদ্যে ঠিকাদার নিয়োগ অনুমোদনের জন্য কাগজপত্র সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মতিন বলেন, আমি গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এখানে যোগদান করেছি। ওই টেন্ডার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।

 

সিভিল সার্জনের পত্রের সাড়া না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্র পেয়েছি। টেন্ডার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।

 

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, আমার কাছে খাদ্যের ঠিকাদার নিয়োগ সুপারিশের কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল। ওই কাগজপত্রের ত্রæটি থাকায় আমি আবার পুনর্মূল্যায়নের জন্য বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি।

 

তিনি ঠিকাদার নিয়োগ করে কাগজপত্র সুপারিশের জন্য আমার কাছে পাঠাবেন।

 

ভোরের আকাশ/নি