logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:৪৭
আজ ভাঙবে প্রাণের মেলা
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

আজ ভাঙবে প্রাণের মেলা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ফেব্রুয়ারি বছরের কনিষ্ঠ মাস। দেখতে দেখতে মাসটি ফুরিয়ে যায়। রক্তে রাঙানো অমর একুশের এই মাসে বসে বইমেলা। বছরজুড়ে লেখক-পাঠক এই মাসটির জন্য অপেক্ষা করেন। বছরজুড়ে অপেক্ষার পর মাসটি এলে মেলে তাদের মিল বন্ধন। বই আদান প্রদানসহ দেখা হয় স্বজনদের সঙ্গে। তারপর মেলা ভেঙে যায়।

 

আবারও এক বছরের জন্য অপেক্ষা বাড়ে লেখক- পাঠকদের। প্রতি বছররের মতো এবারও মেলার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তারা। আজই ভাঙবে বাঙালির প্রাণের মেলা। ইতিমধ্য মেলার ভাঙনের সুর বেজে গেছে। একদিন আগেই কিছু প্রকাশনী তাদের স্টল গুটিয়ে ফেলেছে।

 

গতকাল ছিলো মেলার সাতাশতম দিন। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও যথা সময়ে (বেলা ৩টা) মেলার গেট খোলে। এর পরই মেলায় ঢুকে পড়েন পাঠক-দর্শনার্থীরা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। গতকাল সন্ধ্যার পরই মেলা পুরোদমে জমে ওঠে। উদ্যান এবং একাডেমি উভয় স্থানেই ছিলো উপছে পড়া ভিড়।

 

শেষ সময়ে স্টলগুলোতে বেচাকেনার ধুম লেগেছে। এখন যারা মেলায় আসছেন তার সিংহভাগই ক্রেতা। মেলায এসে পছন্দের বই কিনে নিয়ে ফিরছেন এসব পাঠক। গতকালও মেলায় এমন চিত্র দেখা যায়।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে রেহেনা আক্তার নামে এক পাঠক বলেন‘ আজ নিয়ে ৬দিন মেলায় এলাম। প্রতিদিনই বই কিনেছি। সে তালিকায় খ্যাতমান লেখকদের পাশাপাশি তরুণ লেখকদের বইও রয়েছে। তিনি বলেন, অন্য যে কোন মেলার চেয়ে বইমেলার গুরুত্ব আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। সে জন্য মেলা এলে এখানে মন পড়ে থাকে। মেলা ভেঙে গেলে মন খারাপ হয়। আবার এক বছরের অপেক্ষা বাড়ে।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে কবি লিমা সুলতানা লিপু বলেন, মেলা ভেঙে যাচ্ছে মন তো খারাপ থাকেই। লেখক-পাঠক সবার জন্যই এই মাসটির গুরুত্ব বেশি। তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় বলতে গেলে এবারের মেলা ভালোই বলা যায়।

 

আমার জানা মতে এবার কেনাবেচাও বেশি হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এবার মেলায় তরুণ লেখকরা দারুণ সাড়া পেয়েছে। তাদের বই ভালো বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি বাচ্চাদের বই অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। আগামিতে মেলা আরও বেশি পরিপূর্ণ হবে এই প্রত্যাশা রইল।

 

এদিকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের হামলার হুমকির পর শুক্রবার থেকে অমর একুশে বইমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। গতকালও এ ধারা অব্যাত ছিলো।

 

২০১৫ সালে বইমেলায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের পর একুশে বইমেলায় জঙ্গি হামলা অথবা হামলার হুমকির ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন করে জঙ্গি হামলার হুমকিতে সরকার চিন্তিত না হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

 

জঙ্গিগোষ্ঠী “মাঝেমধ্যে হুমকি দেয়,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা এসবে ভয় পাই না।” “তারপরও আমরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নেইনি। বইমেলা এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে,” ।

 

এদিকে জঙ্গি হামলার হুমকি সত্তেও গতকালও চলমান একুশে বইমেলায় দর্শক-ক্রেতার ঘাটতি ছিল না গতকালও বাড়তি নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে বেশিরভাগ মানুষ পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাকে খারাপ চোখে দেখছেন না।

 

একুশে বইমেলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের একটি চিঠি পেয়েছি। ডাক মাধ্যমে পাওয়া চিঠিটির কোনো সঙ্গতি নেই। চিঠির এক জায়গায় বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ীর হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেউ কিছু বলছে না। এ রকম কাজ চলতে থাকলে, করাচির মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে।”

 

তিনি বলেন, “আবার এর সাথে বইমেলাকে যুক্ত করে বলা হচ্ছে, বই মেলাতেও হামলা করা হবে।”

 

প্রসঙ্গত, এবার বইমেলার ¯েøাগান-‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট।

 

প্রাপ্ত তথ্য মতে এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশু চত্ত¡রে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন ৩৪টি।

 

অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং সর্বমোট ৭০৪ টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল ।

 

এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ভোরের আকাশ/নি