logo
আপডেট : ১ মার্চ, ২০২৩ ১১:২০
কক্সবাজার এলও অফিসে দালালের উৎপাত: মানা হচ্ছে না আদালতের নির্দেশনা
এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

কক্সবাজার এলও অফিসে দালালের উৎপাত: মানা হচ্ছে না আদালতের নির্দেশনা

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার: আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনে মরিয়া কক্সবাজার সদর ও রামুর একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। ইতিমধ্যে প্রকৃত জমির মালিকের টাকা অবৈধ পন্থায় তুলে উধাও হয়েছে অনেক দালাল। তহশিলদার, সার্ভেয়ার, কানুনগো, দালালদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির নানা অভিযোগে মামলা হয়েছে। এসব মামলা এখনো চলমান।

 

এখনো কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বন্ধ হয়নি অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য। এ কাজে বরাবরই সহযোগিতা করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

 

ভুক্তভোগী কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর মোহাম্মদ হাসান ও মনজুর আলম জানান, মহেশখালীর আমান, কক্সবাজারের নুনিয়াছড়ার হাসান, শাহজাহান, জুয়েল, জাফর, দিদার, বরখাস্তকৃত তহশিলদার জয়নাল, রিদোয়ান, আনোয়ার, আলমগীর, মুজিব, সেলিম, শামশুল আলম, আনচার, করিম, নজরুল, বাবরসহ ৮০-৯০ জনের শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট এলও অফিসের দালালি করে জিরো থেকে এখন হিরো।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে অনেকে ইতিপূর্বে দুদকের হাতে দালালিপনা করতে গিয়ে আটকও হয়েছিল।

 

সর্বশেষ রামু ও কক্সবাজার সদরের দুই টিএলএ মামলা নিয়ে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটছে। ফাইল গায়েবের মতো ঘটনা ঘটছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তড়িঘড়ি করে প্রতিপক্ষের হাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দালালের মাধ্যমে বিরোধীয় জমির অধিগ্রহণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তুলে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন এলএ মামলার বাদী পিএমখালীর মোহাম্মদ হাসানসহ অনেকে।

 

তিনি গণমাধ্যমকে জানান, রামু ফতেহারকূল মৌজার এলএ মামলা নং-৩/২০১৬-১৭ যার বিএস খতিয়ান নং-১৯৬, ৯০৬ ও কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার এলএ মামলা নং-০৪/২০১৬-১৭ যার বিএস খতিয়ান নং-১৩৭৭, ৮৭৩, ২৭৫, ৫৭১ ও ১৪৯৪ খতিয়ানভুক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হলে জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়।

 

আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ প্রদান করেন। ওই মামলায় ডিসি, এডিসি (রাজস্ব) ও এলওকেও বিবাদী করা হয়েছে।

 

এলএ মামলা নং-০৪/২০১৬-১৭ এর বিবাদী মনজুর আলম ও গিয়াস উদ্দীন জানিয়েছেন, দালাল মো. আমান ইতিপূর্বে ভুল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝিলংজা মৌজার উল্লিখিত খতিয়ানের অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন।

 

অবশিষ্ট টাকা ও অবৈধ পন্থায় উত্তোলনের জোর পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। দালাল আমান মহেশখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার ও রামুর শত শত একর অধিগ্রহণকৃত বিরোধীয় জমির টাকা উত্তোলন করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

 

যতই দুদকের অভিযান চলুক, গ্রেপ্তার ও টাকা উদ্ধার করা হোক না কেন কিছুতেই ভ‚মি অধিগ্রহণ শাখায় দালালের উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না। অসংখ্য ভুক্তভোগীর অভিযোগ, দালালের মাধ্যমে মোটা অংকের কমিশনের টাকা না আসা পর্যন্ত কোনো ফাইল নড়ে চড়ে না। শুধু তাই নয়, যাদের জমি অধিগ্রহণে পড়েছে তাদের টাকা উত্তোলন করতে গেলে আগে দালালের মাধ্যমে অগ্রিম চেক বা নগদ টাকায় গুনতে হয়।

 

টাকা না থাকলে শতকরা ৫ শতাংশ সুদে টাকা ধার দেয়ার ও একাধিক দালাল ঘুরঘুর করছে ডিসি অফিসের আশপাশে। শহরের বিভিন্ন হোটেল ও বাসাবাড়িতে শতাধিক দালালের অফিস রয়েছে। যাদের কাজ হচ্ছে ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা দালালের মাধ্যমে কেটে রেখে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে হরিলুট চলছে। দুর্বলের টাকা তুলে নিচ্ছে সবলরা। এভাবে চলছে কক্সবাজার ভ‚মি অধিগ্রহণের দৈনন্দিন কার্যক্রম।

 

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান জানান, দালালদের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ না করতে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যেসব ভূমি নিয়ে মামলা মোকাদ্দমা রয়েছে বা আদালতের নির্দেশনা আছে সেসব জমির অধিগ্রহণের টাকা আইন মেনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

 

কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়ম বা দুর্নীতি করে থাকলে, এ ধরনের অভিযোগ বা প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আইনি জটিলতায় পড়ে কেউ হয়রানির শিকার হলে তা মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয় গণশুনানির ব্যবস্থা করে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি