ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী: আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক-রাজনৈতিক আমূল পরিবর্তনে রুশ-ফরাসি-শিল্পবিপ্লব, আমেরিকা-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ উপনিবেশের যাঁতাকলমুক্ত স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে কয়েকটি সাল ও মাস বিশ্ব খ্যাত।
বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৫২-১৯৬৯-১৯৭১ সালের মার্চ-ডিসেম্বর মাস একই ধারাবাহিকতায় উত্তাল ঘটনাপঞ্জিতে পরিপূর্ণ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমকালীন পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায়, উত্তাল মার্চের উচ্চকিত তরঙ্গধ্বনি নতুন করে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর হৃদয়ে উজ্জীবিত।
দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন, ১৯৭০ সালের ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও পাঁচটি প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের উভয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ফলে, পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক এবং ভুট্টোর দলের কূট অপকৌশলের নগ্ন ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহব্বান করে। কিন্তু ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসকের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে।
গভীর রাতে সামরিক আইন প্রশাসক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের সংহতি বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি খবর-মতামত-চিত্র প্রকাশের বিষয়ে সংবাদপত্রসমূহের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ১১০নং সামরিক আইন জারি বাংলায় অবিস্মরণীয় এক দ্রোহী রূপ পরিগ্রহ করে।
অধিবেশন বন্ধের আকস্মিক ঘোষণায় বাংলার আপামর জনতা প্রচন্ড- বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ বাঙালির প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর আহব্বান ১ মার্চ থেকে সারা দেশে চলমান ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও উত্তাল মিছিল স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে।
বাঙালি জাতির পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ধারণ করে সংবাদ সম্মেলনে জনগণের মুক্তির ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এটি পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহির্প্রকাশ মাত্র। আমরা বাঙালিরা ঘৃণাভরে এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলাম এবং ২ মার্চ ঢাকা ও ৩ মার্চ সারা দেশব্যাপী বাংলার সাধারণ মানুষ হরতাল পালন করবে।
পরবর্তী দিক নির্দেশনার জন্য আপনারা ৭ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’ ২ মার্চ হরতাল, মিছিল ও কারফিউর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ছাত্র সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
একই দিন বঙ্গবন্ধু সন্ধ্যায় প্রেস কনফারেন্সে বারবার ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করেন। হরতাল চলাকালীন হিংস্র সামরিক জান্তা বাহিনীর গুলিতে তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র আজিজ মোর্শেদ ও মামুনসহ পঞ্চাশ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
সামরিক আইন প্রশাসক ওইদিন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন এবং পরদিন ৩-৬ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেন।
৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দেবেন। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে- অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ ওই দিন রাত্রে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘২৩ বছর ধরে রক্ত দিয়ে আসছি। প্রয়োজনে আবার বুকের রক্ত দেব।
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে বীর শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ ৪ মার্চ ১৯৭১ গণবিক্ষোভে এক দফার দাবি অর্থাৎ স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় সামরিক জান্তার সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসে।
ওইদিন খুলনায় বাঙালি-অবাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং লাগাতার হরতালে কার্যত ঢাকাসহ সারা দেশ অচল হয়ে পড়ে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য স্বাধীনতার স্লোগানে উচ্চারিত হয় ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন এবং গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
এ দিন রেডিও পাকিস্তান ঢাকার নাম পরিবর্তন করে ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ নামকরণের ঘটনা চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। ৬ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোনে জানান, ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। পরিস্থিতির চাপে ভীতসন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক সদর দপ্তর থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতাদের এই বার্তা দেয়া হয় যে, ৭ মার্চ যেন কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা না করা হয়।
মেজর সিদ্দিক সালিক রচিত গ্রন্থসূত্রে জানা যায়, ‘পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ৭ মার্চের জনসভার প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ নেতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পাকিস্তানের সংহতির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা হলে তা শক্তভাবে মোকাবিলা করা হবে।
বাঙালি বিশ্বাসঘাতকদের হত্যার জন্য ট্যাংক, কামান, মেশিনগান সবই প্রস্তুত রাখা হবে। প্রয়োজন হলে ঢাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হবে। শাসন করার জন্য কেউ বা শাসিত হওয়ার জন্যও কিছু থাকবে না।’ মার্চের দিনপঞ্জির অনুক্রমিক আন্দোলনের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণায় মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অকুণ্ঠচিত্তে তাঁর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করলেন। মওলানা ভাসানী ’৭১-এর ৯ মার্চ পল্টনে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার দাবি ২৫ মার্চের মধ্যে যদি মেনে নেয়া না হয়, তাহলে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক হয়ে স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম শুরু করবেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ৮ মার্চ ছাত্রনেতারা এক যুক্তবিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলার বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ ঘোষণা করিয়া স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক জনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করিয়াছেন, আমরা উহার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া স্বাধীনতার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপাইয়া পড়িবার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহব্বান জানাইতেছি এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত সব নির্দেশকে যথাযথ কার্যকরী করিবার জন্য সমগ্র দেশবাসীকে বিনা দ্বিধায় বাস্তবায়িত করিবার আহব্বান জানাইতেছি এবং কোনো মহল এই কর্মসূচির অন্তরায় সৃষ্টি করিলে তাহাকে অবশ্যই প্রতিহত করিবার জন্য আবেদন জানাইতেছি।’
এদিন সরকারি কর্মচারীরা জীবনের বিনিময়ে হলেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালন করার ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী সব সরকারি অফিস কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগপ্রাপ্ত টিক্কা খানকে মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটির সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি পরিবর্তন করে ৯ মার্চ সামরিক শাসন পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ওইদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন এবং অন্য প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলাদেশে জাতীয় সরকার’ গঠনের জন্য অনুরোধ করা হয়। পল্টনের জনসভায় মওলানা ভাসানীও ২৫ মার্চের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন।
১০ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিককে স্বাধীনতা সংগ্রামে নিয়োজিত প্রতিটি মুক্তিসেনাকে সব ধরনের সাহায্য করার অনুরোধ জানানো এবং পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের আসতে না দিলে বিমানবন্দরে চেকপোস্ট বসিয়ে অবাঙালিকে দেশত্যাগ করতে না দেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়। ১১ মার্চ ভুট্টো ঢাকায় আসতে রাজি মর্মে বঙ্গবন্ধুর কাছে তারবার্তা পাঠায়।
১২ মার্চ সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে সারা আলীর তোপখানা রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত মহিলা পরিষদের সভায় পাড়ায় পাড়ায় মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহŸান জানানো হয়। একই দিন লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগ নিষ্ফল ও বিপজ্জনক হবে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বল প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক।
পরের দিন সামরিক কর্তৃপক্ষের ১১৫নং মার্শাল ল’ আদেশ জারি করে সব বেসামরিক কর্মচারী, যাদের বেতন প্রতিরক্ষা খাত থেকে দেয়া হয়, তাদের ১৫ মার্চ সকালে কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি দেয়া হয়। যেটিকে বঙ্গবন্ধু উস্কানিমূলক বলে অভিহিত করেছিলেন।
তিনি জনগণের সার্বিক স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অসহযোগ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন, বাংলার অসহযোগ আন্দোলনে দিশাহারা হয়ে পশ্চিমা শিল্পপতিরা ১৪ মার্চ সামরিক সরকারের প্রতি স্মারকলিপি প্রদান করে বঙ্গবন্ধুর চার দফা মেনে নেয়ার আহব্বান জানায়।
১৫ মার্চ ইয়াহিয়া গোপনীয় সফরসূচিতে ঢাকায় আসে। ১৬ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। ওইদিন জামালপুরে হাজার হাজার লোক লাঠি ও নানা রকম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল করে। ১৭ মার্চে দ্বিতীয় দফা বৈঠক সম্পন্ন হলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এবং জনগণকে ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকার আহব্বান জানান।
এই দিনে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ কর্তৃক বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই তদন্ত কমিশন চাই নাই।’ সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে এই তদন্ত কমিশনের সঙ্গে কোনো সহযোগিতা না করতে আহব্বান জানিয়েছেন।
১৯ মার্চেও মুজিব-ইয়াহিয়া তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত ৯০ মিনিটের এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। ২০ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া চতুর্থ দফা বৈঠকে আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি অনুমিত হলেও বঙ্গবন্ধু আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান জানান।
২১ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চে প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচি প্রদান ও ২২ মার্চ পত্রিকায় পরিকল্পিত বাংলাদেশের পতাকার মাপ ও বিবরণ প্রকাশ করে। ২৩ মার্চ দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ভবনসমূহে, বাড়িতে, গাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা বিমানবন্দর ভবন, প্রেসিডেন্ট ভবন ও লাটভবন ছাড়া অন্য কোথাও পাকিস্তানের পতাকা নজরে আসেনি।
ওইদিন বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন। ২৪ মার্চে অনুষ্ঠিত পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের বৈঠকেও বঙ্গবন্ধু কোনো প্রকার নতি স্বীকার না করার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।
সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া বিভিন্ন আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে আবদ্ধ হয়ে ২৫ মার্চ কালরাতে ইপিআর, পুলিশসহ সর্বস্তরের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ইতিহাসের নির্মম গণহত্যা পরিচালনা করে।
মধ্যরাতে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করার আগেই বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেস যোগে চট্টগ্রামের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা প্রেরণ করেন। মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীনতা ঘোষণার একটি কপি এম এ হান্নানকে দেন, যিনি বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি বঙ্গানুবাদ করে ২৬ মার্চ দুপুরের পর সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন।
এরপর স্বাধীনতার ঘোষণাটি সংবাদ আকারে পাঠ করেন বিপ্লবী বেতার কর্মী আবুল কাশেম স্বন্দ্বীপ। পরবর্তী রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের আত্মবিসর্জন, দুই লাখ জননী-জায়া-কন্যার সর্বোচ্চ ত্যাগের পটভূমিতে অর্জিত স্বাধীন মাতৃভূমি, যা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অর্থবহ পরিপূর্ণতার রূপ পরিগ্রহ করে।
বর্তমানে আমাদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর কিংবদন্তি মানস দৃশ্যমান না হলেও চিরঞ্জীব-চিরস্মরণীয় বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব-নির্দেশনায় বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে বিশ্ব পরিমন্ডলে অপরাজিত থাকবেই এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করা মোটেও অত্যুক্তি নয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ভোরের আকাশ/নি