logo
আপডেট : ২ মার্চ, ২০২৩ ১৫:৪২
আমড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান: কর্তৃপক্ষের নজর নেই
কাশেম হাওলাদার, বরগুনা

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান: কর্তৃপক্ষের নজর নেই

বরগুনায় আমড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা: বরগুনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভবন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে, সবসময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভবনটি দূর থেকে দেখলেই চোখে পড়ে জরাজীর্ণ অবস্থা, ভেতরে গেলে চোখে পড়ে ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ার চিত্র। দেখা মেলে আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল।

 

একতলা এই ভবনের ৪ কক্ষের সবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এ কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরাও। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই বলে অভিযোগ মিলেছে।

 

সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের আমড়াতলা গ্রামে ১৯৮৮ সালে (জমি দাতা) মৃত হোসেন আলীর ছেলে কাসেম মোল¬ার ৬০ শতাংশ জমির ওপর ৬৯নং আমড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৯ সালে ৪ কক্ষের একতলা ভবনটি নির্মাণের পর থেকে এখানেই স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩। শিক্ষক রয়েছেন ৫ পদের মধ্যে ৪ জন। দুটি পদ খালি রয়েছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শিফটে তিনজন শিক্ষার্থী ও তিনজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। ১৯৮৮ সালে নির্মিত এ বিদ্যালয় ভবনে ২০১৮ সালে ত্রুটি দেখা দেয়ার পর ধীরে ধীরে শ্রেণিকক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

 

বৃষ্টির সময়ে ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে মেঝেতে। অনেক কক্ষের দরজা-জানালা নেই। ফলে সবসময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পাঠদান চালু রাখার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ ৪টি কক্ষেই চলছে ছয়টি শ্রেণির ক্লাস।

 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯৯৯ সালে ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে প্রাক থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেয়া হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষে অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষকদের বসার কক্ষ। তবে বর্তমানে কোনো ভবন না থাকায় সবকটিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও কক্ষগুলোতে এখনো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে।

 

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না।

 

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোসা. জায়েদা, রিয়া মনি ও শামিম জানায়, ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে তারা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে। বাবা-মা আসতে দিতে চায় না।

 

শিক্ষিকা রিনা আক্তার জানান, প্রায় ৫ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকে তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। এতে দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে।

 

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কারণে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে শিক্ষার মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষার্থীরা আরো স্কুলবিমুখ হবে এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

 

দ্রুত এ বিষয়ে একটি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত বছরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাসেল মিয়া বলেন, পুরো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যেকোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

 

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রাও বিদ্যালয়ের এ দুরবস্থা থেকে উত্তরণের দাবি জানিয়ে আসছেন।

 

বরগুনা সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ভবনের জন্য আবেদন পাইনি! আমাদের অফিসে আবেদন করলে অবশ্যই আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

 

বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আ. রাজ্জাক বলেন, আমড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমি অবগত নেই, তবে আপনাদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি।

 

এই ভবনগুলো মূলত এলজিইডি নির্মাণ করে থাকেন। আশা করছি, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকলে আমি শিগগিরই অফিসিয়ালি প্রোসেসিং অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

 

ভোরের আকাশ/নি