logo
আপডেট : ৪ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৭
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে তোলপাড়
সিলেটে সিটি মেয়র নির্বাচন: আ.লীগই আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ
খালেদ আহমদ, সিলেট

সিলেটে সিটি মেয়র নির্বাচন: আ.লীগই আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ

খালেদ আহমদ, সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীতা নিয়ে আওয়ামীগে বিরোধ প্রকাশ্যে দেখা দিয়েছে। আগামী জুন মাসে সিলেট সিটি মেয়রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

 

আগামী সিটি নির্বাচন নিয়ে সিলেটে আওয়ামীলীগই এখন আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ। প্রার্থীতা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ পরিবারের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর হঠাৎ সিলেট ছুটে আসা নিয়ে। দলীয় মেয়র পদে লড়ার ঘোষনা নিয়ে।

 

ওসমানী বিমানবন্দরে নামার পর সংবর্ধনার জবাবে আনোয়ার ‘সিলেটবাসীর জন্য কাজ করতে চাই’ মন্তব্য কওে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার গুঞ্জন উস্কে দেন। এর পরই আনোয়ার“জ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে সিলেট আওয়ামীলীগে শুরু হয় তোলপাড়।

 

লন্ডন থেকে সিলেট পৌঁছে মোটরসাইকেল শোভা যাত্রা সহকারে নগরীতে এসে হজরত শাহজালাল রহ: মাজার জেয়ারত করেন। পরে আনোয়ারুজ্জামান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও দেখা করেন। পরে সিলেটে পররাষ্টমন্ত্রী ড. মোমেনকে নিয়ে কয়েক হাজার মহিলার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরন করেন আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। অনুষ্ঠানে পররাষ্টমন্ত্রী আনোয়ারুজ্জামানের প্রশংসা করেন।

 

এরপর থেকেই জোরেশোরে আলোচনায় আসে তার নাম। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রথমদিকে নিরব থাকলেও পরে মূখ খুলতে শুর করেন। একে একে ৫ নেতা নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষনা করেন। এরপর নগরজুড়ে ‘আনোয়ারুজ্জামানকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ শ্লোগান দিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। ফলে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর প্রার্থীদের মধ্যে ‘চাপা ক্ষোভ’ দেখা দেয়।

 

সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে নগর আওয়ামীলীগে শুর হয় এক ধরনের টানাপোড়ন । বিরোধ কয়েক দিন ভেতরে থাকলেও পরে তা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। বিভক্ত হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে নেতিবাচক ‘বহিরাগত’ ‘নগরীর ভোটার নন’ বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন। মূলত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢেলে দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

 

গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বক্তব্যের পরই বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। তিনি বক্তৃতায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামানকে আগামী সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এরপর শুরু হয় তোলপাড়।

 

মহানগর আ:লীগের বিবৃতিতে সভাপতি বীর মুক্তেযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহব্বান
জানান।

বিবৃতিতে তারা জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একটি ওয়ার্ডে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সিসিক মেয়র পদে নির্বাচনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা মহানগর আওয়ামী লীগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

 

এ বিষয়ে দুই নেতা ‘সুস্পষ্ট ভাবে’ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব প্রাপ্ত হিসেবে তারা পাননি। অতএব ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগরের শৃঙ্খলাসহ দলীয় ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট না হয় এবং বিভ্রান্তি যাতে না ছড়ানো হয় সে জন্যে তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

 

বিবৃতির বিষয়ে পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, তারা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) যে অভিযোগ এনে বিবৃতি দিয়েছেন, এমন কোনো শব্দ আমার
বক্তব্যে ছিলো না। সিলেটে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে আমি কোনো বক্তব্যই রাখিনি।

 

জানা যায়, আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলের সর্বো”চ পর্যায় থেকে তাকে ‘গ্রীণ সিগনাল’ দেওয়া হয়েছে তার অনুসারী শুভাকাঙ্খীরা প্রচার করছেন। ইতোমধ্যে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও দেখা করেছেন তিনি। এ সময় সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও তাকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দাবি আনোয়ারুজ্জামান।

 

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, এসব (প্রার্থিতা) বিষয়ে দলীয় কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। এখানে আমিসহ আরো কয়েক জন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছি। সবাই
কাজ করছি। তিনি (আনোয়ার“জ্জামান) নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে দল যাকে প্রার্থী করবে, তার পক্ষেই আমরা সবাই কাজ করব।

গতবার মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া এবার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়াও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর নেতারা হলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু ও সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী।

 

তারা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

 

জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন আনোয়ার“জ্জামান চৌধুরী। সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দও থেকে ওই দিন হাজারো কর্মী-সমর্থক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে
তাকে নগরীতে নিয়ে আসেন।

 

এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গুর“ত্বপূর্ণ বেশ কয়েক জন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী এবং সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান অন্যতম।

 

আনোয়ার“জ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পরিচিত নেতা। সিলেটেও রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি কি মাঠ পর্যায়ে সিটিতে তার তেমন কোন রাজনৈতিক তৎপরতা ছিলনা। হঠাৎ করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেটের মাঠে তিনি। গত এক মাস ধরে চষে বেড়াচ্ছেন সিলেটে।

 

প্রতিদিনই ব্যস্ত সকাল থেকে রাত অবধি নানা কর্মকাণ্ডে। দলীয় কিংবা সামাজিক সবখানেই তার সরব উপস্থিত। এটি তার জন্য কঠিন পরীক্ষা। সিলেট আওয়ামী লীগে শেকড় গেড়ে থাকা নেতাদের জন্যও এটি পরীক্ষা। আনোয়ার তাদের রাজনীতির জন্য হুমকি।

 

এই অবস্থায় আনোয়ারকে ঘিরে সিলেট আওয়ামী লীগে বিভক্তি আরও জটিল হচ্ছে। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের দিক থেকে আনোয়ার একদিকে আর অন্যদিকে সবাই। ধীরে ধীরে আনোয়ার ছাড়া অন্য প্রার্থীদের ঐক্য সুদৃঢ় হচ্ছে। পরপর দু’বার সিলেটে নিজেদের কোন্দলের কারণেই হাতছাড়া হয়েছিল সিটি করপোরেশনের মসনদ। ভোটের মানুষ কামরান ধরাশায়ী হন বর্তমান বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে।

 

এদিকে, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চার নেতা জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি