logo
আপডেট : ৫ মার্চ, ২০২৩ ১০:৩৪
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ১৯৯৭১ সালের মার্চের অন্যান্য দিনের মতো আজকের দিনটিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মার্চের শুরু থেকে দিন যত পেরোতে থাকে পাকিস্তানি শাসকদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ তত তীব্র হয়। ৫ মার্চ দেশের শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায়।

 

মিছিল আর প্রতিবাদের আরেক নাম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। পঞ্চম দিনেও বিক্ষোভে-বিদ্রোহে উত্তাল ছিল সারাবাংলা। এতে সামরিক প্রশাসনের টনক নড়ে। জনরোষের মুখে সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।

 

রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারি নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।’ জনতার ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে সারা দেশে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা।

 

এদিন হরতাল পালনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় চারজন শ্রমিক শহীদ হন এবং ২৫ শ্রমিক আহত হন। প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম ও যশোরে। রাজশাহী ও রংপুরে পুনরায় সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। এ সংবাদে ঢাকায় জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

 

এদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছিল হরতাল। এরপর দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জরুরি লেনদেনের জন্য ব্যাংক খোলা রাখার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, তা এদিন থেকে কার্যকর হয়।

 

‘একাত্তরের দিনগুলি’তে এ সম্পর্কে লিখেছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তিনি লেখেন, পূর্ব পাকিস্তানের সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। তার নির্দেশ ছাড়া অফিস, দোকানপাট, ব্যাংক-বীমা কিছুই চলছিল না।

 

মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

 

বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের আহব্বানে সাড়া দিয়ে বিকেলে কবি-সাহিত্যিক ও শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। শহীদ মিনারে ড. আহমদ শরীফের সভাপতিত্বে এক সভায় স্বাধীনতার শপথ নেয়া হয়। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে লাঠি মিছিল বের করা হয়। প্রবীণ সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ পাকিস্তান সরকারের খেতাব ও তকমা বর্জনের আহব্বান জানান।

 

সার্বিক পরিস্থিতি, গতি-প্রকৃতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৫১ পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি