নিখিল মানখিন: থমকে গেছে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম! করোনার অস্তিত্ব থেকেও যেন নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ সংশ্লিষ্টদের। দৈনিক শনাক্তকৃত নমুনার সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা টেস্ট করাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মানুষ। হাসপাতালে যাচ্ছে না করোনা রোগীরা। করোনা উপসর্গ ও উপসর্গহীন মানুষের স্বাস্থ্যবিধিহীন অবাধ মেলামেশা চলছে। প্রথম ডোজ নিয়েও দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছে না প্রায় হাজার হাজার মানুষ। করোনার ভয়াবহতা ভুলে গেলে চলবে না। এভাবে চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতি যেকোনো সময় অস্বাভাবিক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, করোনা রোগী শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসাসেবা ও টিকাদান ছাড়া করোনা মোকাবিলায় সরকারি কর্মসূচি যেন হারিয়ে গেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়টি সরকারি নজরদারিতে নেই। করোনা রোগী শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহের পরিধিও প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছেনি। স্বাস্থ্যবিধি পালনসহ সরকারি নির্দেশনাগুলো অনেক আগেই কার্যকারিতা হারিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
লঞ্চ এবং ফেরিতে স্বাভাবিক সময়ের মতোই গাদাগাদি করে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার এবং দূরত্ব রেখে যাত্রী বহনের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাস্ক পরার আগ্রহও নেই।
সরকারি-বেসরকারি অফিসেও ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি সামনে আসছে। কমিউনিটি সেন্টারগুলোয় প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেখানে স্বল্প জায়গায় মিলন ঘটছে বিপুলসংখ্যক মানুষের। সমুদ্রসৈকত ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় মানুষের উপচেপড়া ভিড়।
হাসপাতালে যাচ্ছে না করোনা রোগীরা : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে যাচ্ছে না করোনা রোগীরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো করোনাবিষয়ক দৈনিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড সাধারণ শয্যার প্রায় ৯৯ শতাংশই খালি থাকছে। আর নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী তেমন নেই। সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ৪ মার্চ মোট ২৬ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন।
সারা দেশে দৈনিক সুস্থ হওয়া রোগীর হার ৯৮.৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিদিন ১.৬৫ শতাংশ করোনা রোগী রয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে তেমন রোগী নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, করোনা আছে, করোনা নেই।
বাস্তবতা হচ্ছে দেশে এখনো করোনার সংক্রমণ রয়েছে। কিন্তু করোনা টেস্ট করাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মানুষ। হাসপাতালে যাচ্ছে না করোনা রোগীরা। করোনা উপসর্গ ও উপসর্গহীন মানুষের স্বাস্থ্যবিধিহীন অবাধ মেলামেশা চলছে।
উপগর্স দেখা দিলে সেন্টারে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসতে হবে। আর নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রমের সংশ্লিষ্টরাও নমুনা সংগ্রহে আগের মতো উদ্যোগী হবেন। যত বেশি নমুনা পরীক্ষিত হবে, দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তত বেশি প্রকাশ পাবে। করোনার ভয়াবহতা ভুলে গেলে চলবে না বলে জানান তিনি।
দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজস্টি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, উপসর্গ দেখা দেয়ার পরও করোনা পরীক্ষা করোনার জন্য নমুনা দিতে না যাওয়ার বিষয়টি ভালো লক্ষণ হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে অবহেলা ঠিক হবে না। সংক্রমিত হওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দিলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
সরকারের রোগতত্ত, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, করোনা শনাক্তরণ ও হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ভ‚মিকা রাখবে। স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। করোনার সংক্রমণ সর্বত্র বিস্তার ঘটতে খুব বেশি সময় লাগে না।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ ভোরের আকাশকে বলেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অবহেলা করা ঠিক হবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার বিষয়টি সাধারণ মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে যাবে না। সরকারকেই এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। করোনা সংক্রমণের পূর্বের অবস্থায় চলে গেছে দেশের মানুষের চলাফেরা।
একদিকে নেই সরকারি নির্দেশনা; অন্যদিকে করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি ভুলে যেতে বসেছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণের হার হঠাৎ বেড়ে গেলে দেশ বড় বিপদে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
ভোরের আকাশ/নি