পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী। চারদিকে সবুজ গাছপালা। শান্ত পরিবেশ। এমন স্থানটি নড়াইল পৌর শহরের সরকারি জিলা স্কুলের বিপরীতে থানা সড়কে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ প্রয়াত শরীফ আতিয়ার রহমানের বাসভবন। এ বাড়িটির নিচ তলায় শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি সংসদ নামে ‘ফ্রি’ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এখানে প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার দিনব্যাপী বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। লোকজন এ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রকে সুচিকিৎসার বাতিঘর বলেন। প্রতি সপ্তাহে ১০০ থেকে শুরু করে ১৫০ জন পর্যন্ত ‘ফ্রি’ রোগী দেখা হয়।
২০২২ সালের ৪ নভেম্বর এ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রের যাত্রা শুরু। উদ্বোধনী দিনেই ব্যক্তিগত অর্থায়নে ২৬ জন দেশসেরা প্রখ্যাত চিকিৎসককে নিয়ে প্রায় তিন হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক হাজার রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন।
জানা যায়, নড়াইল জেলার অন্যতম সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক সংগঠন শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি সংসদের স্বপ্নদ্রষ্টা ও মুখপাত্র গরিব এবং অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল অধ্যাপক ডাক্তার শরীফ জাহাঙ্গীর আতিক সংক্ষেপে এস জেড আতিক। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শল্য চিকিৎসাবিদ ডাক্তার এস জেড আতিক বিনা পারিশ্রমিকে সেবা দিয়ে আসছেন। বাবার নামে গড়া এ সংগঠনটির মাধ্যমে তিনি ও তাঁর পরিবারের মোট ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কাজ করছেন। নিয়মিত মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন ও সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে এই সংগঠনটি।
নিরন্ন অসহায় মানুষকে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও স্বাবলম্বী করার জন্য স্বপ্নকে বাস্তবায়নের অভিপ্রায় নিয়েই তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ডাক্তার আতিক। গরিবের বাতিঘর হয়ে ওঠা সেই মানুষটির জন্ম নড়াইল সদরের ভবানীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করে ১৯৭২ সালে নড়াইল সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস ও ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৮১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রোস্ট অব স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে ১৯৮২ সালে তৃতীয় বিসিএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেন। এরপর ১৯৮৯ সালে চাকরিরত অবস্থায় সরকারিভাবে বিদেশ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর কল্যাণকর কর্মের পরিধি বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। একেবারে সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের কল্যাণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনকে সামনে রেখে নিজ বাসভবনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। বর্তমান বাস্তবতায় গরিব মানুষের শেষ ভরসা ডাক্তার আতিক ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা করে তিনি রোগীদের আস্থা অর্জন করেছেন।
চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সংগঠনটির চিকিৎসকরা হচ্ছেন- ডাক্তার আতিকের সহধর্মিণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার তাওফীকা হোসাইন (তুলি), সহোদর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মুখমন্ডল ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শরীফ শামীম আতিক, ভাতিজা ডা. শরীফ জায়েদ আতিক (অমি), ভাগনি ডা. জান্নাতুল প্রিয়াংকা। চিকিৎসা পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও হাতযশ আর ভালো ব্যবহারের কারণেই ধনী-দরিদ্র সব মানুষের কাছেই সমান জনপ্রিয় ডাক্তার আতিক।
ভোরের আকাশ/আসা