শাহীন রহমান: ৫ সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল হচ্ছে রমজানের পরেই। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এসব সিটির নির্বাচনের জন্য ৪৫ দিন হাতে রেখে তফসিল করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে জুনের মাঝামাঝি নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। তবে এসব সিটির নির্বাচন এক দিনে করা হবে, না আলাদা দিনে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ৫ সিটির মধ্যে বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী এই তিন সিটি নির্বাচন এক দিনে করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। অন্যদিকে গাজীপুর ও খুলনা এই দুই সিটি নির্বাচন এক দিনে করা হতে পারে। আবার আলাদা দিনেও অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে ইসির বৈঠকেই নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এছাড়াও ইসি পরিকল্পনায় আগে শুধু গাজীপুরে এক দিন ভোট করারও পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে। এক্ষেত্রে খুলনা-রাজশাহী এক দিনে এবং বরিশাল ও সিলেটে আরেক দিনে ভোট করারও চিন্তা রয়েছে তাদের। আবার চার সিটিতে এক দিনে এবং গাজীপুর অন্যদিনে ভোট করার প্রাথমিক চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এর আগেই ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরেই সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়। সব নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। ৫ সিটির মধ্যে সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করে। বাকি চার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। তবে ৪ সিটিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও বরিশাল সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ফলে ওই নির্বাচনের শুরুতেই বিএনপির প্রার্থীসহ অন্যরা নির্বাচন বর্জন করেন। ২০১৮ সালে ১৫ মে অনুষ্ঠিত হয় খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। পরে ৩০ জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারো দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে এই ৫ সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
জানা গেছে, আগামী ২২ অথবা ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এরপর এপ্রিলের শেষ দিকে ৫ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ৪০ থেকে ৪৫ দিন হাতে সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে মধ্য জুন নাগাদ এসব সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ইসির রয়েছে।
তবে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলে বিএনপি। এর পরই এই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করে আসছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠিত সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এরপরে ঢাকা সিটি করেপারেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলে তারা। এরপর বিএনপি আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। বর্তমান ইসির অধীনে সবগুলো নির্বাচনই বর্জন করে চলেছে তারা। ৫ সিটি নির্বাচনেও তাদের অংশ গ্রহণের সম্ভবনা ক্ষীণ। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত ৫ সিটি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিএনপি বর্জন করলে অনেকটা উত্তাপহীন হয়ে পড়তে পারে সিটি নির্বাচন।
আইন অনুযায়ী, কোনো সিটির মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করতে হয়। এ হিসাবে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে আগামীকাল ১১ মার্চ থেকে। এ সিটির নির্বাচন ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। খুলনা ও রাজশাহী সিটির ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৩ এপ্রিল। ১০ অক্টোবরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বরিশাল সিটি ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৪ মে, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে ভোট করতে হবে। সিলেট সিটি ভোটের ৬ মে থেকে পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে, ৬ নভেম্বরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সিটি নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, জুনের আগে দু-একটা সিটি ভোট হবে। বাকিগুলো জুনের পরে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিটি ভোট শেষ করব। নির্বাচন উপযোগী হওয়ার শুরুর দিকে সিটি নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আলমগীর বলেন, যেহেতু আমাদের জাতীয় নির্বাচন আছে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে, সেজন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শেষের দিকে না করে প্রথম দিকেই সম্পন্ন করা।
ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী এ বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পরের বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এ জন্য এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগেই আগেই সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ভোরের আকাশ/আসা