logo
আপডেট : ১২ মার্চ, ২০২৩ ১০:২৭
বিএনপির তৃণমূলের বৈঠক পর্যবেক্ষণ
আন্দোলনেই সমস্যার সমাধান চান জনপ্রতিধিরা
এম সাইফুল ইসলাম

আন্দোলনেই সমস্যার সমাধান চান জনপ্রতিধিরা

এম সাইফুল ইসলাম: বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে ‘কঠোর আন্দোলন’ চান বিএনপির তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। সরকারের দেয়া নানা টোপ আর লোকদেখানো সংলাপের দিকে তাকিয়ে না থেকে কার্যকরী আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে তারা কেন্দ্রের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন।

 

সম্প্রতি দলের সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের নেতারা এ আহব্বান জানিয়েছেন। আন্দোলনের ‘বিকল্প’ দেখছেন না স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারী তৃণমূল নেতারা। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের তৃণমূলের চাওয়া ও মনোভাবকে গুরুত্ব দেবে দল। দলীয় সরকারের অধীনে গতবারের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার সিদ্ধান্ত নিতে দল কোনো ভুল করবে না।

 

জানা গেছে, গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারা দেশে দলের বর্তমান ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। প্রতিটি বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা আলাদা ওই বৈঠক বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এছাড়া বিএনপির শীর্ষনেতারাও বৈঠকে অংশ নেন।

 

বৈঠকে দলটির আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনায় তৃণমূলের মতামত জানতে চান নেতারা। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তি ভোরের আকাশকে বলেন, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। আগামী দিনে সরকার তাদের দাবি মানবে এমন কোনো আশাও তারা করেন না।

 

অতীতের অভিজ্ঞতায় আদায়ে রাজপথের কোনো বিকল্প নেই দেখছেন না তারা। আন্দোলনের কৌশল ও ২০১৮ সালে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া নিয়েও অনেকে কেন্দ্রকে ‘কাঠগড়ায়’ দাঁড় করান। বিষয়টি নিয়ে অনেক নেতা, কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ নিয়ে কথা বলেন।

 

তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বর্তমান সরকারেরর পদত্যাগ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দাবি আদায়ে বিএনপি এখন দৃঢ়ভাবে মাঠে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও সঙ্গে রয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জ মোবাবিলা করে তারা এখন এসব ইস্যুতে রাজপথমুখী। এখন বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রলোভনে সরকার ‘নানা টোপ’ দিতে পারে।

 

সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আওয়ামী লীগ আবারো সংলাপের প্রস্তাব দিতে পারে। মূলত আন্দোলনের গতি কমাতে ও দলের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াতে সরকার সব ধরনের আয়োজন করবে বলেও মনে করেন তারা। কিন্তু বিএনপি যদি ২০১৮ সালের মতো আবারো এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায়, তবে আবারো পরিণতি আগের থেকেও খারাপ হবে। তাই ‘ঢাকাকে টার্গেট’ করে তারা আন্দোলনের ছক কষতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবি জানান।

 

তৃনমূলের বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, ইতোমধ্যে সরকার নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করেছেন। যার অংশ হিসেবে সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে নতুন করে রাজনীতি শুরু করেছে। তার রাজনীতিতে বাধা নেয় বলে সরকারের মন্ত্রীরা যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা দুরভিসন্ধিমূলক। কিছুদিন আগেও খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে চাইলে তার পরিণতি খারাপ হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু হঠাৎ তাদের ‘নরম সুরে’ নানা প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা।

 

এছাড়া গত ৬ মার্চ সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংলাপের প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রয়োজনে তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফোন দেবেন’। এটিও সরকারের ফাঁদ বলে মনে করেন তারা।

 

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, চলমান অবস্থায় আমরা আন্দোলনের বিকল্প দেখি না। সংলাপ বা কোনো সমঝোতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে হবে বলেও আমরা মনে করি না। এছাড়া সরকারের সংলাপ নাটকে যেন দল আর না যান, সে ব্যাপারে আমরা বৈঠকে কথা বলেছি। আমরা চাই আন্দোলনের মাধ্যমে একটা সমাধান।

 

যশোরের মনিরামপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য নিস্তার ফারুক ভোরের আকাশকে বলেন, তৃণমূল চায় আন্দোলন। আমাদের নেতা তারেক রহমানও চায় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বলেছি, এ সরকার সংলাপ সমঝোতা যাই বলুক, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

তাই আগামীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সরকার পতনের কার্যকরী আন্দোলন চাই। তিনবারের এ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের মামলা আর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ এখন আন্দোলনের বাইরে কিছু ভাবছেন না। কারণ ১০১৮ সালের অভিজ্ঞতা তারা ভুলে যায়নি।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। তিনি বলেন, লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষকে বাঁচাতে ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে অবাধ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে তৃণমূল বিএনটি সেটিই চায়।

 

আশা করছি, এবার কেন্দ্রও তার বাইরে কিছু ভাবছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে সব ধরনের আন্দোলন করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ বা সমঝোতা হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। কারণ আওয়ামী লীগ বারবারই সংলাপের নামে প্রতারণা করেছে। আন্দোলন নিয়ে কেন্দ্র আর তৃণমূলের ভাবনার মদ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

 

দলটির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের কথা আমরা শুনেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও শুনছেন। তিনি কর্মীদের কাছ থেকে খোলামেলা কথা শুনছেন। সুতরাং সঠিক সময়ে দল সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি