logo
আপডেট : ১১ মার্চ, ২০২৩ ১৩:৪৩
শিক্ষকতা ছেড়ে সফল কৃষক মোস্তফা
নোয়াখালী প্রতিনিধি

শিক্ষকতা ছেড়ে সফল কৃষক মোস্তফা

নিজের সূর্যমুখী বাগানে মো. মোস্তফা

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন মো. মোস্তফা (৫০)। ৫০০ টাকা বেতন হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। তাই শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি ফিরে আসেন পারিবারিক কৃষিতে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কৃষিকাজ করে তিনি এখন সফল। মুখে এখন তার সূর্যমুখীর হাসি।

 

মো. মোস্তফা সুবর্ণচর উপজেলার চর আমানউল্যা ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। এ বছর ২০ একর লবণাক্ত পতিত জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন তিনি। তার মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি ও চাষে লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় তৈরি হয়েছে সূর্যমুখী চাষের সম্ভাবনা।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, দিগন্তজুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হাসি চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সূর্য ঝলমলিয়ে হাসছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। সূর্য যখন যেদিকে হেলছে, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে পড়ছে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মৌমাছির দল যেমন ছুটে আসছে তেমনি প্রকৃতিপ্রেমীরা আসেন দল বেঁধে।

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে কৃষক মো. মোস্তফার ২০ একর জমিসহ উপজেলাজুড়ে মোট ২১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে।

 

সূর্যমুখী ফুলের শুকনো বীজ থেকে উৎপাদিত হয় তেল। পাশাপাশি এ ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গোখাদ্য। তুলনামূলক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখীর আবাদে উৎসাহী হয়ে উঠছেন উপজেলার কৃষকরা।

 

কৃষক মো. মোস্তফা বলেন, এই মাঠে আমার দাদা কৃষিকাজ করতেন। পরবর্তীতে আমার বাবা কৃষিকাজ করেছেন। আমি ৯১ সাল থেকে কৃষিকাজ শুরু করি। এর আগে দীর্ঘদিন বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। আমার কাছে শিক্ষকতা ভালো লাগত না; কেননা এখানে বেশকিছু কৃষিজমি পড়ে থাকত। এরপর কৃষিকাজ শুরু করি। প্রায় ৩০ বছর ধরে কৃষিকাজ করছি।

 

তিনি আরো বলেন, আগে থেকেই কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার কাছে কৃষি ভালো লাগে তাই শিক্ষকতা ছেড়ে পুরো সময় কৃষিতে দেই। ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার জীবন ভালো কাটছে। এখন মাসে ১৫-১৬ হাজার টাকা থাকে আমার। এতে করে আমার সংসার ভালোভাবে চলছে।

 

কৃষক মো. মোস্তফা আরো বলেন, সূর্যমুখীতে খরচ কম লাভ বেশি। প্রতি একরে সার, বীজ ও চাষসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আবহাওয়া ভালো থাকলে একরপ্রতি উৎপাদন হয় ১৫ মণ সূর্যমুখী। প্রতি মণ বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা। মোট বিক্রি করতে পারলে ৪৫ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিলে আমাদের ৩০ হাজার টাকা করে লাভ থাকবে।

 

কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লবণাক্ত হওয়ায় এই জমিতে কোনো ফসল হতো না। পতিত জমি হিসেবে এটা পড়ে ছিল। কৃষি অফিসার আমাদের বললেন লবণাক্ত জমিতেও সূর্যমুখী আবাদ হয়। তিনি সার বীজ দিয়েছেন আমরা আবাদ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় আমরা খুশি।

 

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ উদ্দীন সূর্যমুখী আবাদ দেখতে আসেন। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে আমরা কেবল সবজি করি। সূর্যমুখী কখনো করি নাই। কৃষক মোস্তফা ভাইয়ের সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতে আমিও আবাদ করব।

 

ইসমাইল হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, আমি ঘুরতে এসে অবাক হয়েছি। আমাকে সূর্যমুখীর বীজ দিয়েছে কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় এ বছর আবাদ করিনি। মাঠ দেখে আমার মন ভরে গেছে। আগামী বার আমি অবশ্য সূর্যমুখী আবাদ করব। দেখতেও সুন্দর আর ফলনও ভালো হয়।

 

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনা এবং আগামী তিন বছরের মধ্যে তেল ফসলের ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছি।

 

এ বছর ৩১ হেক্টরের বিপরীতে উপজেলাজুড়ে মোট ২১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। আমরা ১৪০০ কৃষককে বীজ এবং সার প্রদান করে থাকি। লবণাক্ত জমিতে কোনো পানি ছাড়াই সূর্যমুখী আবাদ সম্ভব। সূর্যমুখী থেকে তেল খেয়ে কৃষক সুস্থ থাকবে এবং অতিরিক্ত তেল বিক্রি করে লাভবান হবে।

 

এতে করে দেশের বাইরে থেকে তেল আমদানি কমে যাবে এবং আমাদের দেশও লাভবান হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি