logo
আপডেট : ১২ মার্চ, ২০২৩ ১০:৪২
মধ্য মার্চ থেকেই তান্ডবের আশঙ্কা
কালবৈশাখীর আনাগোনা গ্রীষ্মের শুরুতেই
শাহীন রহমান

কালবৈশাখীর আনাগোনা গ্রীষ্মের শুরুতেই

শাহীন রহমান: এবার পুরো শীতকালে বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। শীত শেষে বেড়ে গেছে উষ্ণতাও। আগে আগেই প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের আনাগোনা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বৈশাখী ঝড়ের আনাগোনা। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এবার অন্যবারের তুলনায় বৈশাখী ঝড়ের প্রবণতা অনেক বেশি থাকবে।

 

সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের প্রবল গরমের সময় কালবৈশাখী ঝড় হয় দেশে। তবে এবার আগেই এই ঝড়ের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্য মার্চের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী ঝড়ের তান্ডব শুরু হতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

 

আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এবার ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই দেশে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সময় আবহাওয়ার বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে শীতের উত্তরের হাওয়া কমে আসে। পশ্চিমা লঘুচাপের আধিক্য থাকে।

 

সবকিছুর সংমিশ্রণের কারণে এই কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হয়। মার্চ এবং এপ্রিল এই দুই মাসে বেশ কয়েকটি তীব্র কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট আরো কিছু ঝড় হতে পারে।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে শুরু হতে বঙ্গোপসাগর থেকে গরম বাতাস বয়ে যায় উত্তর দিকে আর হিমালয় থেকে ঠান্ডা বাতাস আসে দক্ষিণে। এই ঠান্ডা ও গরম বাতাসের মিলনস্থলে বজ্রসহ ঘনকালো মেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস নিচে নেমে এসে কালবৈশাখী ঝড়ের সৃষ্টি করে। সাধারণত চৈত্র মাসের শেষে এবং বৈশাখ মাসে সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়।

 

ফলে এ অঞ্চলের বাতাস সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। এভাবে বিকেলের দিকে এ অঞ্চলে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তরে এবং হিমালয়ের দিকে বাতাসের চাপ বেশি থাকে। তাই উচ্চ চাপের উত্তরাঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্ন চাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হওয়ার ফলে মুখোমুখি স্থানে যে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি হয়, সেটিই দেশে কালবৈশাখী নামে পরিচিত।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, কালবৈশাখী একটি স্থানীয় বৃষ্টিপাত ও বজ্রঝড় যা বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে মার্চ থেকে কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায়। অনেক সময় এই ঝড় জীবনঘাতী রূপ ধারণ করে। গ্রীষ্ম ঋতুর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এ ঝড়ের আগমন ঘটে। কালবৈশাখীর বায়ুর গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিমি.।

 

কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিমি.র বেশিও হতে পারে। কালবৈশাখীর স্থায়িত্বকাল কখনো কখনো এক ঘণ্টারও বেশিকাল হয়। যদিও কালবৈশাখীর সময়কার বৃষ্টিপাত বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার ধান, পাট এবং আসামের চা চাষের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। তবে জীবনমানের ক্ষয়ক্ষতি কম নয়।

 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, খুব অল্প সময় অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝড়টি তৈরি হয় বলে কয়েকদিন দিন আগে এ সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। অবশ্য কোনো অঞ্চলে ব্যাপক গরম পড়লে তখন কেউ কেউ অনুমান করেন যে, এ ধরনের ঝড় হতে পারে। তবে এটি নিতান্তই আবহাওয়ার অবস্থা দেখে অনুমান করা। কালবৈশাখী কোথায় কতক্ষণ হবে, সেটি আগে থেকেই জানিয়ে দেয়ার মতো বৈজ্ঞানিক কোনো উপায় এখনো নেই।

 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন, এটি তৈরি হয় ৫/৬ ঘণ্টা আগে আর শতভাগ বোঝা যায় ২/৩ ঘণ্টা আগে। পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হলে ঢাকায় আসতে যতক্ষণ লাগে সেটি বলে দেয়া যায়। আর কোথাও কোথাও অন্য লক্ষণ দেখে বিকেলের ঝড় সম্পর্কে সকালে কিছুটা বলা সম্ভব হতে পারে।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, বছরের শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়ার আচরণ অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশ টানা খরার কবলে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কালবৈশাখীর সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী ঝড়ের বিষয়ে বারবার সতর্কতা দেয়া হচ্ছে। বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত একটি গভীর অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে।

 

তাই বিহার, ছত্তিশগড়ের দিকে আবহাওয়া সংক্রান্ত কিছু গতিবিধি ধরা পড়ছে, যা কালবৈশাখী ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধীরে ধীরে এটি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

এদিকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এছাড়া খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ও এ আশঙ্কা রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি