logo
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০২৩ ১৪:৪০
কুমিল্লায় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও টিকে আছে মৃৎশিল্পীরা
লাকসাম (কুমিল্লা)

কুমিল্লায় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও টিকে আছে মৃৎশিল্পীরা

কুমিল্লার মৃৎশিল্প

কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী খ্যাত সব উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমারপাড়ায় নানা সংকটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কুমার মাটির অভাবে এ অঞ্চলের মৃৎশিল্পীরা আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে মারাত্মক বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া জেলায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আজো টিকে আছে মৃৎশিল্পীরা।

 

তার ওপর বিগত ২ বছর যাবত করোনার প্রভাবে আর্থিক সংকটসহ নানা বাধা-বিপত্তির মাঝে পৈতৃক পেশা ধরে রাখতে দুর্ভোগের শেষ নেই। উপজেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকায় কুমার মাটি খুঁজে খুঁজে ব্যস্ত সময় পার করলেও পৈতৃক পেশা কুমারশিল্প আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

 

জেলার দক্ষিণাঞ্চলের কুমার শিল্পীদের একাধিক সূত্র জানায়, একটা সময় কুমার শিল্পের কাঁচা মাটি হাতের কাছেই পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে তা অনেকটা দু®প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। তারপরও দূর-দূরান্ত থেকে বেশি অর্থ ব্যয়ে কাঁচা মাটি সংগ্রহ করে হরেকরকমের মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

 

চলমান সময়ে মৃৎশিল্পীদের কদর একেবারেই নেই। এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই আজ বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। জেলার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম পৌর শহরের ধামৈচা, উপজেলার বাকই ইউনিয়নের কোঁয়ার, লালমাই উপজেলার শানিচৌঁ, বাগমারা, নাওড়া ও বিজয়পুর, মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলাসার, লক্ষণপুর, নাওতলা, বচইড় ও ধিকচান্দা গ্রামে মৃৎশিল্পীদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

 

অথচ কালের আবর্তে এখন তা যেন অতীত। লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার কুমার পট্টিতে এখন হাহাকার অবস্থা এবং অনেকেই এ পেশা গুছিয়ে অন্য পেশায় নেমেছে।

 

সূগুলো আরো জানায়, তাদের পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে কাঁচা মাটি কেনা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, স্থানীয় সিন্ডিকেট চক্রের চাঁদাবাজিসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া এ অঞ্চলের অসংখ্য নদী-খাল, পুকুর ও জলাশয় অবৈধ ভরাট বাণিজ্যে ওই কুমার মাটি সংগ্রহে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কুমার মাটির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়।

 

তারপরও খুঁজে পাচ্ছে না ওই মাটির সন্ধান। একটা সময় এলাকার পুকুর-জলাশয়, ডোবা নালা খননে মৃৎশিল্পীদের খবর দিত কুমার মাটি নেয়ার জন্য। অথচ সেই অতীত আজ চিন্তাও করা যায় না। মৃৎশিল্পীদের মাটির তৈরির সরঞ্জামের বিপরীতে বাজারে দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের সিলভার, প্লাস্টিক ও ফাইবার মিশ্রিত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা মাটির তৈরি সরঞ্জাম এখন আর মানুষ কিনতে চায় না।

 

জেলার দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক নগরী খ্যাত লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার কুমার ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের কুমারপাড়ার চিত্রে কাঁচা মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, কলস, থালা-বাটি, ফুলের টব, ফুলদানি, শিক্ষার্থীদের ব্যাংক, খেলনাসহ শৌখিন হরেকরকম সামগ্রী ব্যবহার ও বিপণন হতো।

 

বাংলা বছরের ১ বৈশাখ আসলেই দেখা যায় কুমার শিল্পীদের নানা কারুকাজে তৈরি নানারকম পণ্য বিভিন্ন মেলায় শোভা পেত। কিন্তু এখন আজ যেন ওইসব পণ্য হাতের নাগালের বাইরে। কুমারদের হস্তশিল্পে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে ভরা মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের ছবি ফুটিয়ে তুলতেন তারা।

 

তৎকালীন সময়ে মৃৎশিল্পীদের তৈরি জিনিসপত্রের কোনো বিকল্প ছিল না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা পেলে হয়তো তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে অভিমত মৃৎশিল্পীদের।

 

ভোরের আকাশ/নি